কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দ্রুত ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেবহাটা উপজেলার চাষিরা। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউ ধান নিয়ে ফিরছেন বাড়ি।
অন্যদিকে, ফসলের মাঠে ও বাড়ির উঠানে চলছে ধান মাড়াই। দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। তবে এ বছর বোরো ধানের ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষক। ঝড়-বৃষ্টির আগেই ধান কাটা শেষ করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। দেবহাটা উপজেলার মাঠের পর মাঠ সোনালী ধানের সমারোহ দোলা দিচ্ছে কৃষকের মনে। কিন্তু আকাশের কালো মেঘ, যেকোনো সময় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাদের কপালে।
এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ধান কেটে বাড়ি নেয়া ও মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেবহাটা উপজেলার চাষিরা। দম ফেলার যেন সময় নেই কারো। অনেকে মাঠেই করছেন ধান মাড়াই।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এভাবেই চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব। বুধবার (১০ মে) দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের একদল ধান কাটায় ব্যস্ত। আরেকদল ব্যস্ত সেই ধান মাথায় বা ঘাড়ে করে বাড়ি নেওয়ার জন্য। আবার অনেক কৃষক মাঠের পাশেই ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরতে ব্যস্ত।
দেবহাটা উপজেলার কৃষকরা সাংবাদিক কে এম রেজাউল করিম এর নিকট বলেন, শুনতে পাচ্ছি আগামী সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়সহ শিলাবৃষ্টি হতে পারে। প্রায় প্রতিদিনই আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। অকাল বন্যা বা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির হাত থেকে ধান রক্ষায় আগেভাগেই এবার ধান কাটা শুরু করেছি। কৃষকরা আরও জানান, এবার ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে। বিঘায় ২৫-৩০ মণ হারে ধান হয়েছে। বাজারে দামও মোটামুটি ভালো আছে। খরচ বাদ দিয়ে লাভ ভালোই হবে। এবার ধান কাটায় শ্রমিক সংকট নেই বলেও জানান তারা।
দেবহাটা উপজেলা বরাবরই শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গত কয়েকবছর যাবৎ এই পরিধি ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত ঘটেছে। এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য জমি লবনাক্ত পানি বেষ্টিত চিংড়ী চাষ হয় সেই চিংড়ী ঘেরে লবনাক্ত সহনীয় ইরি বরো ধান চাষ হওয়ায় দেবহাটা উপজেলায় অতীতের যে কোন সময় অপেক্ষা অধিকতর ইরি বরো ধান উৎপাদন হচ্ছে।
গত কয়েক দিন যাবৎ দেবহাটা উপজেলার ধান ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে কোন কোন ধানক্ষেত সংলগ্ন এলাকাতে কাটা ধান মাড়াই চলছে। ধানের বিচুলীরও অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম নয়, গো খাদ্য হিসেবে এই বিচুলী ব্যবহৃত হওয়ায় ধান মাড়াই এর পর পরই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি মহিলা শ্রমিকরাও ধানকাটা কাজ করছে।
এক্ষেত্রে পুরুষের অপেক্ষা মহিলা শ্রমিক মূল্য অপেক্ষাকৃত কম। বিঘা প্রতি ধান কাটতে শ্রমিক মুল্য দিতে হচ্ছে তিন হাজার টাকার কাছাকাছি। বর্তমান সময়ে ধানমূল্য অন্যান্য বছর অপেক্ষা বেশী হওয়ায় সঙ্গত কারনে কৃষকরা খুশি, কেউ কেউ ধান মাড়াই করার পর পরই তা পাইকার ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করছে আবার অনেকে গোলায় ভরে রাখছে আগামীর জন্য আবার সেদ্ধ শুকানো ও চাল তৈরীর কাজে ব্যস্ত।
দেবহাটা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর সাংবাদিক কে এম রেজাউল করিম এর নিকট জানান এবার দেবহাটা উপজেলায় ৬১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে ইতোমধ্যে ৯৫% ধান কর্তন হয়েছে। ঝড়, শিলাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষায় শতকরা আশি ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল কৃষকদের। দেবহাটা কৃষি অফিস সবসময় কৃষকদের পাশে আছেন এবং থাকবেন।