নানা দুষ্কর্ম আর দলবিচ্ছিন্ন হয়ে বিতর্কিত বর্তমান এমপিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। তাই আরও ৫০ জন আওয়ামী লীগের দলিও এমপির মনোনয়ন হাত ছাড়া হচ্ছে। তিন মাসে আগে এর তালিকায় ৮০ জন থাকলেও এখন তা বেড়ে অন্তত ১৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের তথ্য, সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক স্তরের সর্বশেষ জরিপে ১৩০ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। এসব সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আভাস দেয়া হয়েছে এ তালিকা আরো বাড়তে পারে। চূড়ান্ত মনোনয়নের আগ পর্যন্ত তিন মাস পরপর এ জরিপ চলবে।
সূত্র জানিয়েছে, জরিপে যে ১০ ধরনের অভিযোগে মনোনয়ন দিচ্ছে না তা হল:
এলাকায় গডফাদারের ভূমিকা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা ও এলাকায় খুবই কম যাওয়া, নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রুপিং করে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রাখা, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দলে ভিড়ানো, চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া ও টাকা ফেরত না দেওয়া, বিরুদ্ধে বললেই হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি বা পঙ্গুত্ববরণ অথবা জীবন নিয়ে নেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং বিদ্যুতের লাইন দেওয়ার নাম করে জনসাধারণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া। এ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানির মত অভিযোগও আছে কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে। বর্তমান এমপিদের মধ্যে কেউ কেউ হত্যা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন। আবার কারো বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কয়দিন আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কক্সবাজারের বিতর্কিত এমপি বদিউর রহমান বদি মনোনয়ন পাবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা যায়,আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক বছর আগে থেকেই প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমানে মন্ত্রী-এমপিদের কে কি করছেন সে তথ্য ছাড়াও তিনি সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। অনেককে ডেকে এনে সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও যারা সংশোধন হননি তারা আর সুযোগ পাবেন না। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কাজে শত ব্যস্ততার মাঝেও নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, কে বাদ পড়বেন এটি যেমন দেখছেন, তেমনি বর্তমান এমপিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনের ফলাফলে কী প্রভাব পড়তে পারে সেই বিষয়টিও তিনি পর্যালোচনা করছেন। সব হিসাব মিলিয়ে ৩শ’ আসনে কারা মনোনয়ন পাবেন তার প্রাথমিক তালিকা করে রেখেছেন। তবে তিন মাস অন্তর জরিপ হালনাগাদ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নেতাকর্মীদের কাছে ভালো ভাবমূর্তি ও জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এলাকায় সুপরিচিত, মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, সংগঠক হিসেবে দক্ষ, সত্, নিষ্ঠাবান ও শিক্ষিতরাই দলীয় প্রতীক পাবেন। সাংগঠনিক কাজে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও দলীয় আদর্শ ধারণ করে অন্যান্য পেশার কাউকে কাউকেও মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনাও আছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের সারাদেশ থেকে বাছাই করছেন। এবার এমন প্রার্থী দেয়া হবে যারা লড়াই করে বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন। আবার ক্ষেত্রবিশেষে বিএনপির প্রার্থীর প্রভাব, গ্রহণযোগ্যতার বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নির্ভর করবে। প্রায় শতাধিক আসনে বিএনপির প্রার্থী কারা হচ্ছে সেটিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যেসব এমপি তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা নেই, ক্ষমতার দাপট দেখান ও জনসাধারণের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, প্রশাসনের ওপর ভর করে নিজস্ব আলাদা বলয় সৃষ্টি করেছেন তারা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না।
বিতর্কিত এমপি এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের আমলনামা এখন শেখ হাসিনার হাতে :
নাম প্র্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, নৌকার প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থী কারা হচ্ছে সেটি দেখা হবে। যারা বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হওয়ার মত জনপ্রিয় তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে থাকবেন দলের হাইকমান্ড। ‘জনবিচ্ছিন্ন’, ‘গডফাদার’ ও ‘বিতর্কিত’ এমপি-মন্ত্রীদের কপালে এবার খারাপি আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল মনে করছেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে অনেক প্রতিযোগিতামূলক। এ কারণে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও এলাকায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে ভোটের আগেই এক ধাপ এগিয়ে থাকতে চায় সরকারি দল।
মনোনয়ন পাচ্ছেন না যারা:
উল্লিখিত ১০ কারণে মনোনয়ন ঝুঁকিতে থাকা এমপিদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪ জন, ঢাকায় ৪ জন, খুলনায় ৩ জন, টাঙ্গাইলে ১ জন, গাইবান্ধায় দু’জন, নীলফামারীতে ১ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, দিনাজপুরে ১ জন, নওগায় ১ জন, রাজশাহীতে ১ জন, পাবনায় ২ জন, মেহেরপুরে ১ জন, কুষ্টিয়ায় ১ জন, যশোরে ২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন, বাগেরহাটে ১ জন, বরগুনায় ১ জন, পিরোজপুরে ১ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, বরিশালে ১ জন, ঝালকাঠিতে ১ জন, জামালপুরে ১ জন, শেরপুরে ১ জন, ময়মনসিংহে ১ জন, নেত্রকোনায় ১ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন, ফরিদুপুরে ১ জন, শরীয়তপুরে ১ জন, সুনামগঞ্জে ১ জন, মৌলভীবাজারে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন, কুমিল্লায় ২ জন, চাঁদপুরে ২ জন, ফেনীতে ১ জন, নোমিনেশন পাবে না বলে জানাযায়।