নিজস্ব প্রতিনিধি :
দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ স ম আলাউদ্দীনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আয়োজনে শুক্রবার (২০ জুন) সকালে আলোচনা সভার শুরুতে স ম আলাউদ্দীনসহ দেশ এবং দেশের বাইরে মৃত্যুবরণকারী সকল সাংবাদিকের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্যায়ভাবে যেসব সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। একইসাথে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বক্তারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেসব সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন তাঁদের মধ্যে স ম আলাউদ্দীন ছিলেন প্রথম হত্যার শিকার। ১৯৯৬ সালের ১৯জুন তাঁকে নিজের পত্রিকা অফিসে কাটা রাইফেলের গুলিতে হত্যা করেছিল সাতক্ষীরার চিহ্নিত কুচক্রীমহল। স ম আলাউদ্দীনকে হত্যার পর খুনিচক্র থেমে থাকেনি। তাঁর পরিবারকে হুমকি দিয়ে নির্যাতন করে চলেছে। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। একের পর এক মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, স ম আলাউদ্দীনের হত্যার পর একে একে খুন হয়েছেন যশোরের শামসুর রহমান কেবল, খুলনার হুমায়ুন কবির বালু, মানিক সাহা, রশিদ খোকন, বেলাল হোসেন, নহর আলী, সাতক্ষীরার চঞ্চল সিংহসহ অনেকে। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের অনৈক্যের কারণে একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, অগণিত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ ভূলুণ্ঠিত। অথচ দেশের যেকোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিকদের ত্যাগ ও ভূমিকা অনন্য। বক্তারা সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দীনের অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তারা বলেন, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর সৃজনশীল মানবিক চিন্তা, চেতনা ও কর্ম সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে ঋদ্ধ করেছে। তিনি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ভোমরা স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রমিকদের স্বার্থে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করেছিলেন। আধুনিক কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশে নিজের জমিতে বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গণমানুষের ভয়সকে জাতির সামনে তুলে ধরতে “দৈনিক পত্রদূত” পত্রিকা প্রতিষ্ঠা স ম আলাউদ্দীন। তিনি ছিলেন একজন সিদ্ধহস্ত শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দিয়ে সুষম উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। অর্থনীতির বিকাশে তিনি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তাঁকে হত্যা করায় সাতক্ষীরার উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে থমকে যায়। তাঁর নীতি, আদর্শ, মননশীল চিন্তা ও কর্ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে অম্লান থাকবে। বক্তারা সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ বেতার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ও আজকের পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চ্যানেল আই-এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না, আর টিভি’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, দৈনিক জনতার বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিদাস রায়, দৈনিক কাফলার এম ঈদুজ্জামান ইদ্রিস, দীপ্ত টিভির রঘুনাথ খাঁ, চ্যানেল ৭১ টিভির বরুণ ব্যানার্জি, দৈনিক পত্রদূতের বার্তা সম্পাদক এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ মহিদার রহমান, বাংলাদেশের খবর ও বাংলাদেশ নিউজ-এর আব্দুস সামাদ, চ্যানেল ডিবিসি’র এম বেলাল হুসাইন, সাংবাদিক আব্দুল মোমিন, জিএম আমিনুল হক, হাবিবুল হাসান, জেলা গণফোরামের সভাপতি আলী নূর খাঁন বাবুল প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন এখন টিভির আহসানুর রহমান রাজিব, দৈনিক জন্মভূমির শহিদুল ইসলাম, বাংলা ট্রিবিউনের আসাদুজ্জামান সরদার, সাংবাদিক তৌফিকুজ্জামান লিটু, ইদ্রিস আলী, আব্দুর রহমান, সেলিম হোসেন, হাসান গফুর, জাকির হোসেন, মাসুদ হাসান মনি, জাকির হোসেন, মেহেদী হাসান শিমুল, সাকিব হোসেন, হাশেম আলী প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, বাসস ও বাংলাভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ।##