চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি কামনা করে রাজধানীর মসজিদে-মসজিদে জুমার নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা। এ জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবার্তা অনুসরণ করার আহ্বান জানান মোনাজাত পরিচালনাকারী খতিব ও ঈমামরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মিনার মসজিদের ইমাম মাওলানা আসাদ বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। চিকুনগুনিয়াসহ সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে স্বাস্থ্যবার্তা অনুসরণ করে চলতে হবে। সুস্থতা আল্লাহর বড় নিয়ামত।’
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের লিখিত অনুরোধে শুক্রবার (৭ জুলাই) এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধের জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মসজিদের খুতবায় সচেতনতামূলকবার্তা পড়ে শোনান খতিবরা। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি কামনা করেন তারা। খতিবরা বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। নিজ আঙিনা পরিষ্কার রাখলে আর মশা জন্মাতে পারবে না।’
সতর্কতামূলক বার্তায় বলা হয়, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মশা যেন কামড়াতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনে বা রাতে যেকোনও সময় ঘুমাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদাভাবে মশারির ভেতর রাখতে হবে। শরীরের অনাবৃত অংশে মশা প্রতিরোধক লোশন ব্যবহার ও জানালায় নেট লাগানো ছাড়াও প্রয়োজনে দরজা-জানালা বন্ধ রাখার জন্যও বলা হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, মশার বংশবিস্তারের স্থানগুলো ধ্বংস করতে হবে। বাসা-বাড়ির আশপাশে মাটির পাত্র, কলসি, খোসা, বালতি, ড্রামসহ যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এসির পানি যেন জমে না থাকে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। কোথাও যেন পানি জমতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মসজিদে মসজিদে দোয়া ও বার্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘এটা মহামারি নয়। তবে এডিশ মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া থেকে যেন মানুষ রেহাই পায়, সে জন্য যা-যা করা দরকার, সবই করছি। মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন এ সচেতনতামূলক বার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়াসহ দফায়-দফায় ওষুধ দেওয়া ছিটানো হচ্ছে।’
এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে জরুরি চিকিৎসা ও পরামর্শ-কেন্দ্র চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দক্ষিণ নগর ভবনে অবস্থিত এ তথ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন ডিএসসিসি সচিব মো. শাহাবুদ্দিন। এছাড়া করপোরেশনের ৫টি অঞ্চলে এরোগ থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়।
বিগত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ চলছে। চিকৎসকরা জানিয়েছেন, জ্বরাক্রান্ত প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গোটা রাজধানীই এডিস মশার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ রোগ থেকে সহসা মুক্তি মিলছে না মানুষের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর কেবল রাজধানীতে থাকলেও সচেতন না হলে ভবিষ্যতে হয়তো পুরো দেশেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেহেতু চিকুনগুনিয়া রোগের কোনও প্রতিষেধক নেই, তাই সচেতনতাই একমাত্র প্রতিষেধক।