নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে সদর উপজেলার চাঁদপুর আদর্শ কলেজে বিএনপি নেতা মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বুধবার (৫ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি কলেজ শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব নাছিমা খানম স্বাক্ষরিত (স্মারক নং: ৩৭.০০০.০০০.৭০.০৬.০০৫.২০১৪-২৪৭) এক পত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালককে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এতে প্রধানমন্ত্রীর ০৩.০৭৯.০১৬.০৪.০০.০২৭.২০১৬ নং স্মারকের সূত্র ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালককে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চাঁদপুর আদর্শ কলেজের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতির নিয়োগ প্রক্রিয়া ও এমপিওভুক্তির আবেদনের বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আদেশে সূত্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর স্মারক নং উল্লেখ থাকার এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিবেচনা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের আদেশটিতে বিষয় হিসেবে বলা হয়েছে, “সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও সদ্য অবসরপ্রাপ্ত লিয়াকত পারভেজের যোগসাজসে সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলাধীন ভালুকা চাঁদপুর কলেজ এর অধ্যক্ষ হিসেবে বি.এন.পি নেতাকে নিয়োগ প্রদান।”
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, “কলেজ এর সভাপতি হিসেবে আমি শুধুমাত্র পরীক্ষায় যিনি প্রথম হয়েছেন তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছি মাত্র। ডিজি এবং বোর্ডের প্রতিনিধিরা যাকে প্রথম করেছেন তাকে নিয়োগ দিয়ে আমি বরং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকেছি। এখানে যোগসাজসের কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর জ্যোতির কোন রাজনৈতিক পরিচয়ও আমার জানা নেই।”
অন্যদিকে লিয়াকত পারভেজ বলেন, ”যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতিকে অধ্যক্ষ নিয়ো দেয়া হয়েছে। তদন্ত হলে হোক, কোন সমস্যা নেই।”
উল্লেখ্য, জ্যোতি গত ১ এপ্রিল ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজ এর অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ৩১ মে পর্যন্ত তিনি তিনি সাতক্ষীরা ছফুরন্নেছা মহিলা কলেজ এ সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভালুকা চাঁদপুর কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদানের সময় ছফুরন্নেছা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন নাহার স্বপ্না তার স্বামী ডাঃ রফিকুল ইসলামের চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছিলেন। তখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। জ্যোতি কিভাবে ছফুরন্নছো কলেজ থেকে ছাত্রপত্র পেলেন তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
এদিকে, একাধিক সূত্র জানায়, ২০ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার ব্যবস্থা করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এর বহুললোচিত তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর রিয়াকত পারভেজ। উল্লেখ্য, প্রফেসর লিয়াকত সাতক্ষীরা সিটি কলেজে থাকাকালীন লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা তছরুপের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি ও চারিত্রিক ক্রটির কারণে অভিযুক্ত এই সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। লিয়াকত পারভেজ যশোর শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে চারকিকালীন ঘূষ গ্রহণের দায়ে অভিযুক্ত হন। ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজ এর অধ্যক্ষ নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে। এমনকি মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতিকে আ. লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠনের নেতা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। যা আদৌ সত্য নয়, বাকশিস, সাতক্ষীরা এধরনের কোন রাজনৈতিক উপদল বা গ্রুপ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন সংগটনটির সাবেক ও বর্তমানএকাধিক নেতা। মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি ১৯৯১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থী হিসেবে ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন, যা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ নথিতে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে।তিনি একই সময়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ হোস্টেল শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।তিনি ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের মানবিক শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে তার আপন ভাই ধূলিহরের সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছেরুল হক হুদার নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী যুবদল সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এরপর জ্যোতি এড. আমজাদ হোসেন ও প্রভাষক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন জিয়া পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির একজন শীর্ষ নেতাও ছিলেন।
তার ভাই হুদার প্রতিটি ইউপি নির্বাচনে জ্যোতি প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্বও পালন করেন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে তার ভাই বর্তমানে জেলা বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা হুদা নির্বাচন করেন। সেখানেও জ্যোতি তার ভাইয়ের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি বলেন, ”কে বা কারা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে আমি জানি না। আমি অনলাইনের মাধ্যমে দেখেছি। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে কখনও যুক্ত নই। আমি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। আমি বরং আ. লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সেক্রটারির দায়িত্ব পালন করে আসছি।”


