দুই বছর ধরেই বিশ্বের শীর্ষ ধনীর খেতাবটি নিয়ে রীতিমতো রশি টানাটানি চলছিল মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মধ্যে।
সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথমভাগে ফোর্বস ঘোষিত শীর্ষ ধনীর তালিকাতেও প্রায় শীর্ষ ধনীর খেতাব থেকে মাত্র ৫০০ কোটি (পাঁচ বিলিয়ন) ডলার দূরে ছিলেন বেজোস।
কিন্তু এবার ফোর্বসের জরিপে গেটসকে হঠিয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী হলেন অ্যামাজনের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ৫৩ বছর বয়েসী জেফ বেজোস। তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৯০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় সাত লাখ সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা।
ফোর্বস জানায়, আজ বৃহস্পতিবার অ্যামাজনের শেয়ার মূল্য ২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ায় বিল গেটসের চাইতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বেশি অর্থের মালিক হয়ে গেছেন বেজোস । তিনি অ্যামাজানের ১৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। যার মূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ফোর্বস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে সপ্তাহের শেষ দিকে এসে অ্যামাজনের শেয়ার মূল্যের উল্লম্ফন ঘটেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিটে লেনদেন শেষ হওয়ার পর ফোর্বস আবারও সেরা ধনীর তালিকাটি হালনাগাদ করবে।
এদিকে সংবাদসংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যামাজানে পণ্য বিক্রি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। যা ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। জুন পর্যন্ত হিসাব পুরোপুরি প্রকাশিত হওয়ার আগেই ১৬ থেকে ২৪ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, সম্প্রতি ব্রিটিশ ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বার্কলেস সম্প্রতি জানায়, ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনই হতে পারে প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের প্রতিষ্ঠান। এমন ঘোষণার পরই অ্যামাজনের শেয়ারদর কয়েক ধাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত বছর দুবাইভিত্তিক অনলাইন খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান সুক ডটকম অধিগ্রহণের পরপরই অ্যামাজনের শেয়ারদর বেড়ে যায়। ফলে ওয়ারেন বাফেটকে পেছনে ফেলে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অর্গানিক ফুড চেইন হোল ফুডসকে (ডাব্লিওএফএম) অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছিলেন তিনি।
এ ছাড়া এর আগেই ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জেফ বেজোস।
বর্তমানে অ্যামাজন ইনকরপোরেশন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স ও ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। ব্যবসা বিস্তারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন বেজোস। তাই তাঁর ও অ্যামাজনের সম্পদ বাড়ছে দ্রুত।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২২ বছর আগে জেফ বেজোসের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছিল অ্যামাজনের। শুরুতে অনলাইনে বই বিক্রি করত কোম্পানিটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা খাতে ডালপালা মেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক এ কোম্পানি।
অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ৬১ বছর বয়সী বিল গেটস ২০০০ সালে মাইক্রোসফট প্রধানের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ নিয়ে মানবকল্যাণের উদ্যোগ ও কাজে ব্যস্ত। এর মধ্যেও বাড়ছে তাঁর সম্পদ। তবে তিনি সম্পদ বাড়ানোর চাইতে অর্থের ব্যবহার করে মানবকল্যাণে বেশি মনযোগী।
আর এই মানবকল্যানের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে বিল গেটস বিশ্বের তখনকার দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে একটি ‘ব্যক্তিগত অঙ্গীকার’ করেছিলেন। যাতে ওই দুই ধনকুবের তাঁদের জীবদ্দশায় মোট সম্পদের অর্ধেক মানবকল্যানে ব্যায় করার উদ্যোগ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ অনগ্রসর দেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় কাজ করছেন এই দুই মহৎপ্রাণ ধনী।
রকলেজ করপোরেশনের মতে, বেজোসের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ৩৩ বছর বয়সী জাকারবার্গের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৭২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।