হাইকোর্টের দেওয়া বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায়ে কেবল দু’জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বয়ে যাচ্ছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। নিম্ন আদালতে আট জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলেও হাইকোর্টের রায়ে মাত্র দু’জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এই শাস্তি বহাল থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকে।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গুলাম ফারুক হামিম নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিশ্বজিৎ-এর ভয়ার্ত মায়াবী মুখ, তার রক্তাক্ত শরীরে হামলে পড়া কিরিচ, লোহার রড হাতে দৃশ্যমান সমস্ত জারজ পশুর ছবিটি এখনও যন্ত্রণাবিদ্ধ করে তোলে, প্রবলভাবে ক্ষুদ্ধ করে। বিশ্বজিৎ, তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেও লজ্জা হচ্ছে এখন।’
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময়ের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা। তার স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, ‘মানুষ ভিডিওচিত্রে তাদের হত্যাকারী হিসেবে দেখলেন; অথচ তাদের কারও শাস্তি কমে গেলো, কেউ খালাস পেয়ে গেলো, পলাতকদের ধরার চেষ্টাই হলো না!’
সাজিদা ইসলাম পারুল নামের এক নারী লিখেছেন, ‘একটা প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড। সীমাহীন বর্বরতা ও নৃশংসতা। ভিডিও ফুটেজ। স্টিল ফটোগ্রাফ। অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী। তাহলে তদন্ত জিনিসটা কী আর বিচার বস্তুটাই বা কী?’
বিশ্বজিতের ওপর হামলার সময়ের একটি ছবি শেয়ার দিয়ে আব্দুল আওয়াল লিখেছেন, ‘এই যে ছবিটা দেখছেন— এটা আসলে ফটোশপ, বিশ্বজিৎ নামের কোনও ব্যক্তিকে কেউ মারেনি, বিশ্বজিৎ বলে কেউ কোনোদিন ছিল না। সব সোনার ছেলেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!’
‘বিশ্বজিৎ হত্যার নারকীয় উল্লাস ছিল এক দানবীয় শাসনের প্রত্যক্ষ ফল! সেই চলমান বীভৎসতা কবে থামবে জানি না। তবু বিশ্বজিৎ হত্যার এ রায় মানি না!’—ফেসবুকে লিখেছেন রাখাল রাহা।
গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সমন্বয়কারী রুবেল আবুল হাসান স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিশ্বজিতের রায় দেখে মনে পড়ে গেলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও পলাতকের ফাঁসি দিয়ে শুরু হয়েছিল।’
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে ছাত্র শিবিরের কর্মী সন্দেহে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালত এ হত্যা মামলায় ৮ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। রবিবার (৬ আগস্ট) বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দু’জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।