আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে জোট গঠনের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ঘন ঘন বৈঠকও করছেন কয়েকটি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তবে এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নেই। দলটি বরং এমন উদ্যোগকে স্বাগতই জানাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় দলটি। নিবন্ধিত সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এটাই চাওয়া আওয়ামী লীগের। এ জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনকে এই স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
এছাড়াও আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসার বিষয়টি মাথায় রেখেই জোট চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি ভোটে না এলেও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক রূপ দিতে অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। জোটবদ্ধ হলে দলগুলোর নির্বাচনের আসার সম্ভাবনাও বাড়বে। আবার বিএনপি এলেও দলটি যাতে কম আসন পায় সেই কৌশল থেকেও জোট প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্ষমতাসীনরা। তাই জোট যতই হোক, দুশ্চিন্তায় নেই আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জোট সম্পর্কে এমন আভাস মিলেছে।
সম্প্রতি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার জোট গঠনের লক্ষ্যে বৈঠক করেন। এরপর এর প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের ইতিবাচক মন্তব্য করেন।এর আগে জাতীয় পার্টিও একটি জোট গঠন করে। ইসলামী কয়েকটি দলও জোট গঠনের চেষ্টায় রয়েছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ভোটের আগে হিসাব-নিকাশ ওলট-পালট না হলে জোট প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এমন কিছু ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে করা হবে না। জোট প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়,তাদের কারও কাছ থেকে এই প্রক্রিয়া নিয়ে নেতিবাচক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সাধুবাদ জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
জোট গঠনের প্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে জোট গঠন করার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। এটা তাদের অধিকার।’ প্রায় একই রকমের মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও ড. আব্দুর রাজ্জাক। এই দুই নেতাও বলেন, রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রিক অধিকার রয়েছে রাজনীতি করার। তারা যদি জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে চায় আমাদের কী বলার আছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা চান বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরে যাতে দেশে-বিদেশে কোনও ধরনের প্রশ্ন উঠতে না পারে। আগামী নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপি ছাড়াও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে বলে দেখানো যাবে। আগামী নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যাতে নির্বাচনী উৎসবে বিএনপির অনুপস্থিতি টের না পায়। আর নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে বলে সবাইকে বোঝানোও সহজ হয়। ফলে লাভ আসবে আওয়ামী লীগের ঘরে। আওয়ামী লীগের ভাবনা হলো-জোটবদ্ধভাবে হোক আর পৃথকভাবে হোক যত বেশি দল অংশ নেবে, নির্বাচন তত বেশি উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতারা এই মুহূর্তে বিভিন্ন দলের জোট গঠনের দৌড়ঝাঁপকে নিজেদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও জানান, জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকা এসব নেতারা কেউ-ই শেখ হাসিনার শুভাকাঙ্ক্ষী নন, তবুও নির্বাচনে তাদের অংশ নেওয়া নিশ্চিত করা গেলে সুফল পাবে আওয়ামী লীগই।
আর বিএনপি নির্বাচনের বাইরে থাকলেও নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার মতো ক্ষেত্র ও পরিস্থিতি তৈরি করে দেয় সেক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোনও মহল সুবিধা নিতে পারবে না। সেই চিন্তা থেকেও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জোট গঠন প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে মাইনাস বিএনপি নির্বাচন করতে গেলেও আওয়ামী লীগ ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘জোট গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই আলাদা পরিকল্পনা থাকে।’