আসাদুজ্জামান : মেয়াদ পূর্ণ হবার পরও গত চার বছর ধরে সাতক্ষীরার সান-লাইফ ইনসিওরেন্স গ্রাহকরা তাদের মূল টাকা ও লভ্যাংশ ফেরত পাচ্ছেন না। টাকার জন্য তারা ঢাকা ও খুলনা অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি। গ্রাহকদের তোপের মুখে এরই মধ্যে জেলার সবগুলি অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারিরা।
এদিকে টাকা ফেরত না পেয়ে অনেকে শাখা ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কয়েকজন শাখা ম্যানেজার গ্রাহকদের হাতে মার খেয়েছেন। টাকার বদলে তাদের সম্পদ কেড়ে নিতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
তবে সানলাইফের খুলনা বিভাগীয় প্রধান বিশ্বজিত মন্ডল জানান, তিন চার মাসের মধ্যে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে’।
জেলার গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাবার দাবিতে আজ সোমবার সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তারা বলেন অবিলম্বে প্রাপ্য টাকা পরিশোধ না করা হলে সাতক্ষীরার তিন হাজার গ্রাহক আন্দোলনে নামবে।
মানববন্ধনে তারা বলেন সানলাইফ ইনসিওরেন্সের ছয়টি প্রকল্পের একটি লোকমুখী বীমা। ২০০০ সালে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০ বছর, ১২ বছর ও ১৫ বছর মেয়াদে টাকা গ্রহণ করে আসছে। ২০১৩ সালে তাদের কিস্তির মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর থেকে মুল টাকা ও লভ্যাংশের চার কোটি টাকা দাবি করে সাতক্ষীরার গ্রাহকরা সানলাইফের কেন্দ্রীয় অফিসে বই পাঠালেও আজ অবধি কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ করে তারা বলেন এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মাজেজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের সাথে নানাভাবে টালবাহানা করা হয়। তিনি কাউকে সাক্ষাত দেন না। তারা সানলাইফের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদের সাথে যোগাযোগ করেও প্রাপ্য টাকার কোনো কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তারা আরও বলেন ঢাকা অফিস থেকে এখন উল্টো টাকা চেয়ে বলা হয় ‘আপনারা মাসিক কালেকশনের টাকা জমা দিতে থাকুন’। গ্রাহকরা বলেন মেয়াদ পূর্ণ না হলেও তাদের অনেকেই কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন। ঢাকা ও খুলনা অফিসে যোগাযোগ করলে তারা টেলিফোনও রিসিভ করেন না। ফলে শত শত গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বীমার শাখা ম্যানেজাররা বলেন টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা এখন তাদের মারপিট করতে শুরু করছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা পৌরসভা, ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। কয়েকজন ম্যানেজার জানান, গ্রাহকরা তাদের বাড়িঘর লুটপাট করছেন। তাদের সম্পদ জোর করে কেড়ে নিচ্ছেন। রাস্তাঘাটে হেনস্থা করছেন। গ্রাহকদের ভয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে গ্রাহকদের তোপের মুখে সানলাইফের জেলাব্যাপী দুই শতাধিক গ্রামীন অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছে কর্মকর্তারা। জেলা অফিসেও ঝুলছে তালা। গ্রাহকরা প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলা অফিসে এসে তাদের না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সানলাইফ ইনসিওরেন্সের খুলনা বিভাগীয় প্রধান বিশ্বজিত মন্ডল জানান, আমি মাত্র দুই মাস যোগদান করেছি। এর আগে দায়িত্বে থাকা খুলনা বিভাগীয় প্রধান ইদ্রিস আলির দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার অনিয়মের কারণে গ্রাহকরা টাকা পাচ্ছেন না। আগামি ৩/৪ মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করা হবে।
মানববন্ধনে এ সময অংশ নেন শাখা ম্যানেজার আবদুস সাত্তার, আজিজা ইসলাম, মো. সালাহউদ্দিন, হাসিনা খাতুন, আকলিমা খাতুন, রেজাউল করিম, রহিমা খাতুন, নুরুল আমিনসহ শতাধিক গ্রাহক।
পূর্ববর্তী পোস্ট