ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম ধর্ষণ মামলায় সাজা পাওয়ার পর মোহভঙ্গ ঘটেছে তার ভক্তকুলের।
তাদের কাছে তিনি আর ‘বাবা’ নন, তার পরিচয় এখন শুধুই একজন কয়েদি। ঘরের দেয়াল থেকে তাই তার ছবি এখন ঠাঁই পাচ্ছে নর্দমায়।
গত সপ্তাহে দুটি ধর্ষণ মামলায় আদালত রাম রহিমের ২০ বছরের সাজা ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার কুকীর্তির খবর যতই চাউর হচ্ছে ততই মোহ কেটে যাচ্ছে ভক্তদের। খালি হচ্ছে রাম রহিমের ডেরা।
এক দিন এই ধর্মগুরুর টানে যারা ডেরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন আজ তারাই বিমুখ হয়ে পড়েছেন। রোজই কেউ না কেউ ডেরা ছাড়ছেন। বাবা’র ছবি ফেলে দিচ্ছেন নর্দমায়।
রাম রহিমের অনেক গুণের কথা শুনে মোহের টানে ডেরা সচ্চায় এসে তার শিষ্য হয়েছিলেন অনেকেই। নিবেদিতপ্রাণভাবে সেবা করে গেছেন গুরুর। মাঝে মাঝে লোকমুখে রাম রহিমকে নিয়ে কুকথা শুনলেও মন মানতে চায়নি তাদের। কিন্তু আজ সবই প্রমাণিত সত্য।
গুরুকে দেখলেই সবকিছু ভুলে যে ভক্তরা অন্ধবিশ্বাসে তার সেবা করেছেন আজ তাদের সে ভুল ভেঙেছে। হারিয়ে ফেলেছেন বিশ্বাস। আর তাই ডেরা ছেড়ে বাড়ির পথে এবার পা বাড়িয়েছেন তারা।
শুধু ডেরা সদস্যদেরই মোহভঙ্গ হয়নি। একই চিত্র দেখা গেছে রাম রহিমের ছোটবেলার গ্রামেও। ‘বাবা’র জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে রাজস্থানের গুরুসার মুণ্ডিয়া গ্রামেও।
১৯৬৭ সালের ১৫ অগস্ট সেখানেই জন্মেছিলেন রাম রহিম। বড় হওয়াও সেখানে। গ্রামের প্রতিটি মানুষ ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন তাকে।
কমবেশি প্রায় প্রতিটি ঘরেই ছিল রাম রহিমের ছবি। কিন্তু, আদালতের রায়ের পরে পাল্টে গেছে চিত্র। সত্য সামনে আসার পর এখন আর ঘরের দেয়ালে নয়, নর্দমায় ঠাঁই পেয়েছে তার ছবি।
দুই শিষ্যকে ধর্ষণের দায়ে ডেরা সাচ্চা সওদা আশ্রমের ৫০ বছর বয়সী প্রধান গুরমিত রাম রহিমকে গত সোমবার ১০ বছর করে ২০ বছরের জেল দেন বিচারক। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার দুই নারীকে দিতে হবে ১৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ।
রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পর পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক তাণ্ডব শুরু করে এই ধর্মগুরুর আড়াই লাখ ভক্ত। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী দিল্লি পর্যন্ত।
ওই সহিংসতায় ৩৮ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার সাজা ঘোষণার দিন নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। আদালতে রায় না দিয়ে রাম রহিম যেখানে আছেন, সেই রোহতক কারাগারে অস্থায়ী এজলাস বসিয়ে সাজা ঘোষণা করা হয়।