ন্যাশনাল ডেস্ক : ২০১৫ সালের এক বিকেল। ভূমধ্যসাগরের তুরস্কের উপকূলে ভেসে আসে এক শিশুর মৃতদেহ। জানা যায় শিশুটির নাম আয়লান কুর্দি। যুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ইউরোপের পথে পরিবারসহ যাচ্ছিল শিশুটি। পথে নৌকা ডুবে সলিলসমাধি ঘটে শিশুটির।
এরপর সৈকতের বালুতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লান হয়ে ওঠে বিশ্বমিডিয়ার চাঞ্চল্যকর খবর। ইউরোপ শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে সিরিয়া সংকটে পড়া হাজারো মানুষকে।
ভূমধ্যসাগরের ভেসে যাওয়া এক আয়লান কুর্দির সৈকতে ভেসে উপড়ে পড়ার নিথর দেহের ছবিটি যেন বিশ্ববাসীকে ইঙ্গিত দিয়ে জানান দিয়েছিল, মানবতা যেন সাগরতীরেই ভাসছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিপীড়নে প্রাণভয়ে একই কায়দায় নৌকায় চেপে সাগর ও নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে জলপথের ঝুঁকির এ যাত্রায় প্রতিনিয়ত নৌকাডুবির ঘটনায় সাগরতীরে ভেসে আসছে একের পর এক রোহিঙ্গা শিশুর লাশ। গত কদিনে দেখা মিলেছে অন্তত ত্রিশের বেশি বেওয়ারিশ রোহিঙ্গা শিশুর লাশ। সবার প্রাণ গেছে নৌকাডুবিতে। এসব ফুটফুটে চেহারার নিষ্পাপ শিশুর অপ্রত্যাশিত মৃতদেহ যেন স্থবির করে দেয় গোটা পৃথিবীকে।
মিয়ানমারে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত বিশের বেশি নৌকাডুবির খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে গত ৩০ আগস্ট রাত ১২টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পাশে নৌকাডুবিতে ১৯ রোহিঙ্গা নারী-শিশুর লাশের মিছিলে। সেদিন গভীর রাতে সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসে ১০ শিশুর মৃতদেহ। একেবারে কোলের শিশু থেকে সাত-আট বছর বয়সী শিশুর মৃতদেহও ভেসে এসেছিল সেদিন।
এর পরও থামেনি সেই মৃত্যুর মিছিল। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আসা থামেনি, নৌকাডুবিও ঘটছে নিয়মিত। প্রতিটি ভোরেই নাফ নদ অথবা সৈকতে মিলছে কোনো না কোনো রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহ। প্রতিটি শিশুর লাশের দৃশ্যে যেন পুরো দুনিয়ার আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছে।
একের পর এক রোহিঙ্গা শিশুদের ভেসে আসা মৃতদেহ দেখে যে কারো হৃদয় কেঁপে উঠবে। নাফ নদীর এ পারের মানুষগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুরা অপরিচিত, অনাত্মীয়। তবু এই রোহিঙ্গা শিশুর লাশ দেখে এপারের বহু মানুষের চোখের জল গড়িয়ে মিশেছে সাগরজলে।
রাষ্ট্রহীন, পরিচয়হীন রোহিঙ্গা বলেই বিশ্ববাসীর কাছে মূল্যহীন এই শিশুরা! শত শিশু সাগরে ডুবে মরছে।