অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা আঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অতীতের মতো এবারও ১৪-দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন ক্ষমতাসীনরা।
জোটকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নিজ দল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, দলের সদস্য ও ভোটার বাড়ানো এবং সরকারের উন্নয়ন প্রচার’— এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী ফসল ঘরে তুলতে জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিতর্কিত এমপিদের ঢাকায় ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে। আগামীতে যারা দলের মনোনয়ন পাবেন তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। মূলত সবকিছুই করা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, এত দিন সরকারি দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর ধারণা ছিল দল আবার ক্ষমতায় আসবে। এজন্য তেমন কোনো বেগ পেতে হবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সে ধারণায় কিছুটা চিড় ধরেছে। তারা এখন মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও কঠিন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কথা বলেছেন। তিনি এমপি-মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো হবে না। টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কিছু এমপি-নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের অতিবাড়াবাড়ি মানুষ গ্রহণ করছে না। অন্যদিকে বিএনপির দলগত ভোট। সবকিছু হিসাব করেই আগামীতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছেন ক্ষমতাসীনরা। এজন্য বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে নির্বাচনী জরিপ। তুলে আনা হচ্ছে দলীয় এমপি ও অন্য দলের প্রার্থীর সর্বশেষ চিত্র। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে হলে যেখানে প্রার্থী পরিবর্তনের দরকার, সেখানে তাই করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য এমপি-মন্ত্রীদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে নির্বাচন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রয়েছে যত দ্রুত সম্ভব গৃহবিবাদ মেটানো। একই সঙ্গে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে এনে নির্বাচনী প্রস্তুতির আগাম ব্রিফিং দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব্ব, কলহ, বিবাদ ও দূরত্ব মেটাতে পুরোদমে কাজ চলছে। নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আসনভিত্তিক প্রার্থীদের অবস্থান জানতে বেশ কিছু জরিপ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে শুধু তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ রাখা হচ্ছে। বিতর্কিত, জনসম্পৃক্ততা নেই এমন ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ’ গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করে। সাংগঠনিক কাজের গতি আনতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের পাশাপাশি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকদেরও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। তারা জেলা-উপজেলায় গিয়ে বর্ধিত সভা, প্রতিনিধি সভা, যৌথসভা, বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করেছেন। এ ধারা আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপারেশনের পর ডাক্তার ছয় সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে ফাইল ছেড়েছেন। দেশে ফিরেই তিনি সরকার ও দলের কাজে যুক্ত হয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ আমরা সবাই সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়, আমাদের আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে— এটা মাথায় রেখেই আমরা সদস্য সংগ্রহসহ দলকে সুসংগঠিত করে চলেছি। জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, কর্মিসভা করা হচ্ছে। দলের ছোটখাটো সমস্যা থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরে আগামীতে কী কী করব, দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই— সেগুলো তুলে ধরছি। ’ আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা নির্বাচনী এলাকায় জরিপ করছি। আমাদের প্রার্থীসহ অন্য দলের প্রার্থীদের কার কী অবস্থা সেগুলোর সঠিক চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করছি। ’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর ওপর নির্ভর করে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দেব। ’ দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার পাশাপাশি জোটের প্রার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যেখানে জোটের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে এবং বিজয়ী হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে, তাদের গ্রিন সিগন্যালও দেওয়া হবে। অন্যদিকে অধিকতর দুর্বল প্রার্থী হলে সেই প্রার্থী পরিবর্তন করে এবার আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ’