বিমানবন্দরে হাঁটাচলা দেখেই সন্দেহ হয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের। মোশারফ হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক্স-রে করানো হয় তাঁর। পরে কর্মকর্তাদের সামনেই টয়লেটে বসে পায়ুপথ দিয়ে বের করেন একে একে সাতটি সোনার বার! এ ছাড়া তাঁর মানিব্যাগে পাওয়া যায় আরেকটি সোনার বার।
আজ বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ভোরে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বিমানবন্দরে নামেন মোশারফ হোসেন (৪২)।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোশারফ সাতটি সোনার বার শরীরের রেক্টামে বহন করছিলেন। শরীরের বৃহদান্ত্র বা কোলনের নিচের অংশ, যেখানে মল জমা হয় ওই জায়গাকে বলে রেক্টাম। শুল্ক গোয়েন্দারা এভাবে সোনা বহনকারীদের নাম দিয়েছেন ‘স্বর্ণমানব’।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ তাদের ফেসবুক পাতায় জানিয়েছে, মোশারফ হোসেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা। মোশারফের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আটটি সোনার বারের ওজন প্রতিটি ১০০ গ্রাম করে মোট ৮০০ গ্রাম। এসব সোনার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
জানা যায়, কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে গ্রিন চ্যানেল পেরিয়ে চলে যাওয়ার সময় তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে শুল্ক গোয়েন্দার দল।
মোশারফের চোখে কালো দাগ ও হাঁটাচলায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে শুল্ক গোয়েন্দার সন্দেহ আরো ঘণীভূত হয়। তবে মোশারফ কোনোভাবেই তাঁর পেটে সোনা থাকার কথা স্বীকার করছিলেন না।
পরে মোশারফকে শুল্ক গোয়েন্দার অফিস কক্ষে এনে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তিনি বারবার তাঁর কাছে সোনা থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন।
মোশারফের শরীরে সোনা থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ায় কর্মকর্তারা অনমনীয় থাকেন। পরে আর্চওয়ে মেশিনে হাঁটিয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়।
নিজে থেকে সোনা বের করে না দেওয়ায় মোশারফকে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে এক্স-রে করানো হয়। ওই এক্স-রে প্রতিবেদনে তাঁর তলপেটে সোনার অস্তিত্ব সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হয় শুল্ক গোয়েন্দার দল। ওই ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকও তা উল্লেখ করেন।
এরপর মোশারফকে বিমানবন্দর এনে শরীর থেকে সোনা বের করার চেষ্টা চলতে থাকে।
মোশারফকে কলা ও প্যাকেট জুস খেতে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় একটি লুঙ্গিও। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে একে একে সাতটি সোনার বার বের করে আনেন এবং পরে তাঁর মানিব্যাগ থেকে আরো একটিসহ মোট আটটি সোনার বার পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, মোশারফ একটি করে সোনার বার সরাসরি রেক্টামে প্রবেশ করান। সোনাগুলো কোনো ধরনের ‘প্যাকেজিং’ ছাড়াই সরাসরি প্রবেশ করান মোশারফ। এ কারণে এসব বের করতে বেগ পেতে হয় মোশারফকে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, বিমানে থাকা অবস্থাতেই টয়লেটে গিয়ে এসব সোনা রেক্টামে প্রবেশ করান মোশারফ। শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই পদ্ধতি গ্রহণ করেন বলে তিনি জানান।
পাসপোর্ট পরীক্ষায় দেখা যায়, চলতি বছর মোশাররফ ৫০ বার কুয়ালালামপুর ভ্রমণ করেছেন। তবে প্রতিবার সোনা বহন করেছিলেন কি না তা জানার চেষ্টা চলছে।
আটক মোশারফ হোসেনকে চোরাচালানের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটক হওয়া সোনা কাস্টমস গুদামে জমা করা হবে। পরে তা বিশেষ পাহারায় বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হবে।