সুন্দরবনের আলোরকোলে দেড়শ বছরের পুরানো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৩ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে এই রাস উৎসব হয়ে আসছে।
বসছে মেলা। দিনেদিনে এই উৎসব হয়ে উঠেছে একটি সার্বজনীন। আগামী শনিবার ভোরে বঙ্গোপসারে দিনের প্রথম জোয়ারের পূর্ণ স্নানের মধ্যদিয়ে এই উৎসব শেষ হবে। রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবন বিভাগসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কঠোর সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা রাস উৎসবের উদ্বোধন করবেন বলে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে। এছাড়া মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং দুবলারচর রাস উৎসব জাতীয় কমিটির আহবায়ক নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাগেরহাট -৪ আসনের এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট -৩ আসনের এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট- ২ আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা এবং খুলনা -২ আসনের এমপি মিজানুর রহমানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সুন্দরবনের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী, পুরুষ ও দর্শনার্থীসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। উৎসব দেখতে আসেন অসংখ্য পর্যটকরাও। পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
এদিকে এ উৎসবে অংশ নিতে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন বিভাগ আটটি পথ নির্ধারণ করেছে। প্রবেশ দ্বারগুলো হচ্ছে, ঢাংমারী, বগী, কচিখালী, শরণখোলা স্টেশন, বুড়িগোয়ালিনি, কৈখালী, কয়রা কাশিয়াবাদ এবং নলিয়ান। এসব পথে বন বিভাগ, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এদিকে রাস মেলায় হরিণসহ অন্য বন্যপ্রাণী নিধন প্রতিরোধে আশংকায় সুন্দরবন বিভাগসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস মেলায় আগতদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা রাস পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পূজা অর্চনা করবেন তাদেরকে পুণ্যার্থী ধরা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে মেলা উপভোগ করার জন্য আগতদের দর্শনার্থী ধরা হয়েছে। দর্শনার্থীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ২১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকার ভেদে বিভিন্ন নৌযানের জন্য আলাদা আলাদা ফি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, এবার রাস উৎসবে যেতে ৮টি নিরাপদ রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ২ থেকে ৪ নভেম্বর এই তিন দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে এবং প্রবেশের সময় সুন্দরবন বিভাগকে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত রুটে পছন্দ মতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবেন। সুন্দরবন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি/সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সনদপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যেকোনও অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে যাত্রীদের বিরত থাকতে হবে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) আমির হোসাইন চৌধূরী জানান, রাস উৎসবকে ঘিরে হরিণসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী চোরা শিকারীদের অপতৎপরতার ও সম্ভাব্য নাশকতা সৃষ্টির আশংকা মাথায় রেখে এবার বন বিভাগসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি আরো জানান, রাস উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।