আইএস’র পর এবার পশ্চিমবঙ্গে আল কায়দা মডিউলের সন্ধান পেল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। মঙ্গলবার আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা থেকে দুই বাংলাদেশিসহ তিনজনকে আটক করেছে এসটিএফ’এর সদস্যরা।
এদের মধ্যে সামসেদ মিঞা (২৬) ওরফে তানভির ওরফে তুষার বিশ্বাস ওরফে সাইফুল বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের খাটশোলা গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে রিয়াজুল ইসলাম (২৫) ওরফে সুমন খুলনার কাসিমনগরের বাসিন্দা। তৃতীয় ব্যক্তি মনতোষ দে (৪৬) বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার খোলাপতার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এসটিএফ’এর ডেপুটি কমিশনার মুরলধীর শর্মা জানান ‘দুর্গাপূজা উৎসবের শেষের দিকে ও ভারতে অনুর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপের শুরুর সময়েই কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)’এর তরফে নির্দিষ্টিভাবে আমাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে ২-৩ জন পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বা শিগগিরি ঢুকবে। এরপর থেকেই গত ২০-২৫ দিন ধরে কলকাতা ও আশপাশের শহরগুলিতে চিরুনি অভিযান চলছিল। এরপর গত তিনদিন ধরে আমরা এই তিনজনের বিরুদ্ধে নিশ্চিত হই। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে কলকাতা রেল স্টেশন থেকে তিনজনকে আটক করা হয়’।
শর্মা আরও জানান ‘আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই আনসারুল্লা বাংলা টিম প্রধানত বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ব্লগার খুনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়দার শাখা যে সংগঠন রয়েছে তার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে এই আনসার বাংলা টিমের। সামসেদ আনসারুল্লা বাংলা টিমের সিনিয়র সদস্য বলেও জানান তিনি। সে তুষার বিশ্বাস নামে একটি ভুয়া ভারতীয় আধার কার্ডও বানিয়ে ফেলে। কিন্তু কিভাবে ওই আধার কার্ড তৈরি করলো সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি’।
সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ওই দুই বাংলাদেশি ভারতে এসেছে বলেও জানা গেছে। এব্যাপারে মুরলীধর শর্মা জানান ‘আটক দুই বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে ভারতের প্রবেশের কোন পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না। গত ১ থেকে দেড় বছর ধরে তারা ভারতে রয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, অস্ত্র, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় আলকায়দা সম্পর্কিত প্রচুর বই ও নথি, রেইকি সম্পর্কিত বই ও বিস্ফোরক তৈরির করার বই, একটি ভুয়া ভারতীয় আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়। এমনকি যে দোকানে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক বিক্রি হয় সেই দোকানের কিছু ভিজিটিং কার্ডও পাওয়া যায় বলেও জানান এসটিএফ’এর ওই কর্মকর্তা’।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ ও রিয়াজুলকে প্রাথমিক জেরায় জানা গেছে প্রধানত ভারতীয় নাগরিক মনতোষের মাধ্যমেই ভারত থেকে অস্ত্রসস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল ওই দুই বাংলাদেশির। মূলত ভাল অস্ত্র (৭.৩২ এমএম, ওয়ান শুটার) দেখানোর জন্যই তারা কলকাতা স্টেশনে জড়ো হয়। সেই খবর পেয়েই আগে থেকেই কলকাতা স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকে এসটিএফ সদস্যরা এবং তাদেরকে আটক করে। আজ আটক তিন জনকেই আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে।
তবে সূত্রের খবর নিজেদের দলে নিয়োগের লক্ষ্য নিয়েই দুই বাংলাদেশি ভারতে এসেছিল বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভারতে নাশকতা সংগঠিত করারও পরিকল্পনা ছিল বলে জানা গেছে। কারণ তাদের কাছ থেকে হাতে লেখা একটি কাগজে কলকাতার ‘এসপ্লানেড বাস স্ট্যান্ড’ ও ‘ইডেন গার্ডেন’-এই দুইটি জায়গার নাম পাওয়া গেছে। যদিও পুরো ব্যাপারটিই গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসটিএফ’এর ডিসি। ভারতে অবস্থানকালে কোন কোন জায়গায় তারা যায় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অাসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছয় সন্দেহভাজন জামায়াত-উল-মুজাহিদন জঙ্গিকে আটক করে এসটিএফ। যাদের মধ্যে কয়েকজন জঙ্গি ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায়ও জড়িত ছিল।