লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তাঁকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।
গতকাল সোমবার লক্ষ্মীপুরের সাবেক সিভিল সার্জন মো. সালাহ উদ্দিন শরিফের সঙ্গে হাতাহাতির পর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় আজ তাঁকে ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে তলবের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শেখ মুর্শিদুল ইসলামকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হলো। জনস্বার্থে জারীকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
গতকাল সোমবার লক্ষ্মীপুর শহরে জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকার কাকলি শিশু অঙ্গনের (বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রবেশ পথে আগে-পরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের বড় ছেলে মিনহাজের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ডা. সালাহ উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চান। কিন্তু এডিসি পরিচয় না দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে এডিসি পুলিশ দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিন আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিনকে ‘অসদাচরণের’ দায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।
খবর পেয়ে জেলায় কর্মরত চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছুটে যান। বিক্ষুব্ধ অবস্থায় চিকিৎসকরা প্রশাসনের সব সেবা কার্যক্রম ও সব হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ রাখার হুমকি দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের মুক্তি দাবি করেন। জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগমের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি করে সাজা দেওয়ার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আপিল করলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন চিকিৎসকদের।
ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফের পক্ষ থেকে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর শওকত হোসেন। আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
ওই ঘটনায় আজ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশফাকুর রহমান ও কামাল হোসেন নিয়াজী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত লক্ষ্মীপুরের সাবেক সিভিল সার্জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড-সংক্রান্ত সংবাদ সংযুক্ত করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ও হাসান এম এস আজিম।
শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ লক্ষ্মীপুরের সাবেক সিভিল সার্জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তিন মাসের সাজা দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে (ইউএনও) তলব করেন। তাঁদের আগামী ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় স্বশরীরে হাজির থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।