ইমিগ্রেশনে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কাস্টমস ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতি ও ভবন ভাঙচুরের ঘটনার জেরে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবনের মূল প্রবেশ পথ সিলগালা করে দিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত চার দিন ধরে উভয় পক্ষ একে অপরকে অভিযুক্ত করে পাল্টাপাল্টি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কাস্টমস সদস্যরা পুলিশের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে পথসভা-মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া বাণিজ্যিক কাজে বিড়ম্বনা ও যাত্রীদের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে বন্দর রক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও কাস্টমসের বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইমিগ্রেশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে প্রবেশ দ্বারে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
এদিকে কাস্টমস আর ইমিগ্রেশন পুলিশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। বিশেষ করে কাস্টমস সদস্যদের কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে তারা নিয়মিত অফিসে না বসায় আরো বেড়ে চলেছে এ ভোগান্তি।
চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা যায়, গত শনিবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভারতে ঢুকতে না পারা যাত্রীরা রোববার ফের ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভারত ফেরত যাত্রী যশোরের ফজের আলী বলেন, কাস্টমস আর পুলিশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। আগে যেখানে আধা ঘণ্টায় দু’পারের সব কাজ শেষ হতো, এখন সেখানে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্ভোগের অন্ত থাকছে না।
যাত্রীরা বলেন, ইদানিং চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন-কাস্টমসে ঘুষ বাণিজ্যে মারাত্মক হয়রানি বেড়েছে। সামান্য কেনাকাটা আর পাসপোর্টে সমস্যা দেখিয়ে কাস্টমস আর পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত টাকা আদায় করছে।
বেনাপোল বন্দর রক্ষা কমিটির সভাপতি ওহিদুজ্জামান ওহিদ বলেন, ঘুষ ছাড়া কাস্টমসে কোন কথা নেই। কোন নিয়ম নীতি না মেনে তারা জোরপূর্বক ঘুষ আদায় করে। ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ না করলে আমরা আগামীতে আরো বড় কর্মসূচি দেবো।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর শরীফ জানান, গেট বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে যাত্রীসেবাসহ প্রয়োজনীয় কাজে গাড়ির ভিতরে নেওয়া যাচ্ছে না। ভবনটি যেহেতু উভয়ের ব্যবহারের জন্য, তাই নির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়া আলোচনা না করে গেটটি বন্ধ করা অযৌক্তিক। আর যাত্রী সেবা বাড়াতে বর্তমানে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে জানান তিনি।
কাস্টমস অফিসার্স ইউনিয়ন সভাপতি নজরুল ইসলাম বাঙালি জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে তারা রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন। উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের একের পর এক কর্মসূচি চলতে থাকবে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, অনিয়ম বন্ধ আর শৃঙ্খলা ফেরাতে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই গেট সিল করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত বন্ধ থাকবে।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজিত জানান, ইমিগ্রেশন এলাকায় যাতে আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা সতর্ক রয়েছেন।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী শাখাওয়াত হোসেন গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভারত থেকে ফিরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পথে কাস্টমসে আটকা পড়েন। কাস্টমস সদস্যরা কেনা-কাটার জন্য তার কাছে ঘুষ দাবি করেন। শাখাওয়াত হোসেন পরে বিষয়টি ইমিগ্রেশন ওসিকে জানান। ওসি তখন কাস্টমস এর রাজস্ব কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে ওই কর্মকর্তা শাখাওয়াতকে লাঞ্ছিত করেন ও ওসিকে অপমান করেন। ইমিগ্রেশনের অন্য পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদ করলে কাস্টমস ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতি, ভবন ভাঙচুরসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় যাত্রী কাস্টমসের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে বেনাপোল পোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।