গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করছে জানিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সব গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা সমন্বয় করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’
সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘তুলনামূলক অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, অপহরণ ও চুরি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নতি সাধন হয়েছে।’
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে মাদকের ব্যাপারে কনসার্ন। মাদক পাচার, মাদক ব্যবসায়ী, গডফাদার-সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেয়া তালিকার ভিত্তিতে মোট ৮৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৮৮ জন জেল হাজতে আছে। তারপরেও এটার ব্যাপারে আরও তৎপর হওয়ার প্রয়োজন। সেই বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আগামীতে তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
গত ডিসেম্বর মাসে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী মিলে মোট ১০ হাজার ১২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে আমু বলেন, ‘সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। সব গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের লিস্ট তৈরি করা হচ্ছে। সব গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা সমন্বয় করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’
‘আমরা মাদকের বিষয়ে জোর দিচ্ছি। জঙ্গি ব্যাপারটা মোটামুটি একটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আছে। মাদকটা যাতে আর বিস্তার লাভ করতে না পারে সেটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছি।’
কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা কতগুলো কর্মপন্থা নিচ্ছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করা, সব স্কুল কলেজের শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করতে চাই। তারা যাতে ক্লাসে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। মসজিদে খুৎবার আগে বয়ানে যাতে ইমাম সাহেবরা মাদকের ক্ষতির জিনিসটা তুলে ধরেন। যাতে একটা সামাজিক বিপ্লব হয়। এগুলো যাতে কার্যকর হয় সেজন্য মনিটরিংও করা হবে।’
২০১৬ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিবিরোধী মোট ৩২টি বড় অভিযান পরিচালিত হয়েছে জানিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘অভিযানে ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। শীর্ষ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছেন ৬৪ জন, ভিকটিম উদ্ধার হয়েছেন ১০৩ জন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন ৮ জন। নিহতদের মধ্যে পুলিশ ৬ জন, র্যাব একজন ফায়ার সার্ভিসের একজন রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি অভিযানে নিহত, হত্যা চেষ্টা, বোমা হামলা ইত্যাদি নিয়ে মোট ৮০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে চারটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। চার্জশিট হয়েছে ২৮টি মামলার। প্রায় সব মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।’
গত ডিসেম্বরে দেশে ১৬ হাজার ৫৪২টি মামলা হয়েছে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘এরমধ্যে উদ্ধারজনিত যেমন- অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার, বিস্ফোরক উদ্ধার মামলা ৮ হাজার ৭৭৫টি। যা মোট মামলার ৫৩ শতাংশ।’
আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।