অনলাইন ডেস্ক: মাধ্যমিকের পদার্থের প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে; বহু স্থানে লঙ্ঘন হয়েছে কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। অনেক কেন্দ্রেই পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও উত্তরের জন্য। এসব ঘটনায় অনেক পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে, অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসভর্তি পরীক্ষার্থী পান যারা হলে ঢোকার আগে মোবাইল ফোনে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেখা ও উত্তর মেলানো নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাদের ধরে নিয়ে আলাদাভাবে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। সাভারের একজন ছাত্রীর হাতে পাওয়া যায় পদার্থের হুবহু এমসিকিউ অংশের উত্তর। বহিষ্কার করার পর মেয়েটি দোতলা থেকে লাফ দিয়ে গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।
বাসে হানা, ধরা ৫৪ : চট্টগ্রামের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ওয়াসা মোড় এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে ঢুকে দেখা যায়, বাসভর্তি পরীক্ষার্থীর অনেকে মোবাইল ঘাঁটছে। অল্প দূরেই বাওয়া স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র। তল্লাশি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট এবং সেগুলোতে পদার্থবিজ্ঞানের এমসিকিউ প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে এই প্রশ্ন মিলে যাওয়ায় বিজ্ঞানের ২৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিল এমন ৯ জন শনাক্ত হয়েছে। অভিযানের সময় বাসে একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি জানতে পারলেও ব্যবস্থা নেননি। তাঁকেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বাসে পাওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ৩০ জন কমার্সের শিক্ষার্থী ছিল। উদ্ধারকৃত প্রশ্নপত্রে কমার্সের প্রশ্ন ছিল না বলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পটিয়া থেকে বাসে আসে আইডিয়াল স্কুলের এই ৫৪ শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া পুলিশ লাইন স্কুল কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী দুই ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী। তিনি বলেন, ওই কেন্দ্রের দুই বোন পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের বাবা মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। এই প্রশ্নপত্র পেয়ে দুই বোনকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের বাবাকে খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে ফটিকছড়ির সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু হাছনাত মো. শহিদুল হক জানান, পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে ফটিকছড়ি হেঁয়াকো বনানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের অদূরে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র দেখার সময় ১০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাকি সাতজনকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আটক করা হয়। তিনি বলেন, আটককৃতরা ফটিকছড়ির বাগান বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, গজারিয়া জেবুন্নেসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং চিকনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রসচিব মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা : অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের ফাঁস হওয়া প্রশ্নের (অবজেকটিভ) উত্তর হাতে লিখে পরীক্ষা দিতে এসে সাভারে এক শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে। ঘটনার পর লজ্জায়-অপমানে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করে ওই শিক্ষার্থী। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক পরীক্ষার্থীর হাতে লেখা নকল ধরা পড়ার পরই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থী তার বন্ধুর মাধ্যমে পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্ন পেয়েছিল বলে তাঁর কাছে স্বীকার করেছে।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই শিক্ষার্থী সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির ইয়াদুল বারী বাবলু ও নাসিমা আক্তার বিউটির মেয়ে। সাভার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গমেজ জানান, তাঁদের কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা দেওয়ার সময় তার হাতে ২৫টি অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তর লেখা দেখতে পান ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) মেজবাহ উদ্দিন। হুবহু প্রশ্ন মিলে যাওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর জান্নাতুলকে বহিষ্কার করা হলে সে বাইরে এসে ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে সেখান থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বাম পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, ওই পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, কুষ্টিয়া জেলার এক বন্ধুর কাছ থেকে রাতে সে প্রশ্নপত্র পেয়েছে।
ইউএনওর তৎপরতায় : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম গতকাল সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হান মেহবুবকে ছাত্র সাজিয়ে রামচন্দ্রপুর রামকান্ত স্কুলকেন্দ্রের কাছে পাঠান। তিনি নিজেও আসেন। পরে দুটি স্যামসাং মোবাইল ফোনসেটসহ খাইরুল ইসলাম নামের এক যুবককে আটক করা হয়। খাইরুল উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। তার মোবাইলে প্রশ্ন ফাঁসকারী অনেকের ফোন নাম্বার ও ছবি রয়েছে বলে মিতু মরিয়ম জানান। তিনি বলেন, অপরাধ স্বীকার করায় তাকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
সৈয়দপুরে গ্রেপ্তার ১, বহিষ্কার ১ : নীলফামারীর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে দুই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এর মধ্যে জায়েদ আলী নামের একজনকে সৈয়দপুর থানা পুলিশে সোপর্দ এবং নয়ন দেবনাথকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জায়েদ আলীর মোবাইল ফোনে পাওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানান সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. তাজউদ্দিন খন্দকার।
নাজিরপুরে ২ বছরের জেল : পিরোজপুরের নাজিরপুরে গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে থেকে রিপন চক্রবর্তী (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রিপন উপজেলার গোবর্ধন গ্রামের শংকর দেব চক্রবর্তীর ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ দণ্ড দেন। ঝুমুর বালা জানান, পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে ওই ছেলের মোবাইলে পাওয়া উত্তর হুবহু মিল পাওয়ায় এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই ছেলের মোবাইলে মেসেঞ্জারে দেখা যায় ঢাকার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র তাকে এ উত্তরপত্র পাঠিয়েছে। প্রেরকের ব্যাপারেও খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পকেটে দুই মোবাইল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী দীপ কুমার দাস ওই বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১০৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিতে যায়। কক্ষ পরিদর্শক মো. লোকমান হোসেন ছাত্রদের দেহ তল্লাশির সময় দীপের পকেটে দুটি মোবাইল ফোনসেট পান। পুলিশ এসে ফোনটি জব্দ করে। পরে পরীক্ষা করে পদার্থবিজ্ঞানের হুবহু প্রশ্ন পাওয়া যায় মোবাইলটিতে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালিদ জামিল খান বলেন, ‘নিয়ম ভঙ্গ করায় তাৎক্ষণিকভাবে ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’ সরাইল থানার ওসি মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই পরীক্ষার্থী জানিয়েছে জয় রায় নামে একজনের কাছ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে সে প্রশ্নপত্রটি পেয়েছে। কেন্দ্রসচিব শেখ সাদি বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দিনাজপুরে গ্রেপ্তার ৭ : বিরলের ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের অদূরে সকাল ৯টায় মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দেখার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ বি এম রওশন কবীর তিন পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনসহ গ্রেপ্তার করেন। কেন্দ্রসচিব বিমল চন্দ্র সরকার জানান, পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে ধুকুরঝাড়ী বাজারের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র দেখার সময় ম্যাজিস্ট্রেড তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তৈয়ব আলী জানান, তিনি গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিন পরীক্ষার্থী হচ্ছে ফরক্কাবাদ এনআই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ও মাঝাপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম নয়ন, মোহনা মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ও ধনগ্রামের মাহফুজ আলম ও মোহনপুর গ্রামের আনছারুল আজিমের ছেলে রিয়াদ উল ইসলাম।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের পরীক্ষা আইনের ৪ ধারা মোতাবেক মামলা করা হয়েছে। বিরল থানার মামলা নং-০৯। তারিখ-১৩-০২-২০১৮ ইং।
এ ছাড়া ধর্মপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয় বলে জানা যায়।
বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ও উত্তর দেখার সময় পরীক্ষার্থী ওমর ফারুককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার মোর্শেদ মোবাইলসহ ধরে কেন্দ্রে নিয়ে যান। পরীক্ষা শুরুর পর প্রশ্নপত্রে মিল পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরীক্ষার্থীর বাড়ি আনোয়ারা ধদইর গ্রামে।
অন্যদিকে বিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে ইউএনও তিন পরীক্ষার্থী কলেজ বাজার এলাকার নাজমুল সাকিব, শৌলাহার গ্রামের শামীম আহমেদ সবুজ ও উড়ুম্বা গ্রামের বিজয় চন্দ্রকে আটক করেন। ইউএনও মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় জব্দ করা একটি স্মার্টফোন থানায় দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রসচিব রইচ উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ইন্টারনেটে প্রশ্ন খোজার অপরাধে মামলা হয়েছে।
ভালুকায় আটক ৪ : গতকাল ময়মনসিংহের ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে ভালুকা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের শামছুল হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা, রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া হবিরবাড়ী ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকা থেকে আটক করা হয় গাজীপুর শ্রীপুরের আবদার গ্রামের সবুজ মিয়াকে। ভালুকা মডেল থানার ওসি মামুন-অর-রশিদ জানান, আটককৃতদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া পরীক্ষা চলাকালে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করানোর অপরাধে তিনজন শিক্ষককে এক হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিতরা হলেন উপজেলার ধলীয়া গ্রামের এইচ এম মুনীম, ভরাডোবা গ্রামের রাজিবুল হাসান ও রোহান আহাম্মেদ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল গতকাল এ দণ্ড দেন।
ভূঞাপুরে আটক ১, বহিষ্কার ৪ : পরীক্ষা শুরুর আগে ভূঞাপুর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরের মাঠ থেকে সিজেন খান ওরফে আব্দুল কাইয়ুম নামে এক কলেজ ছাত্রকে আটক করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ আহমেদ। সহকারী কমিশনার জানান, মঙ্গলবার পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে দেখা যায় চার পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ না করে মোবাইল ফোনে কিছু একটা দেখছে। তাদের জিজ্ঞাসা করতে গেলে মোবাইলের মালিক পাপ্পু পালিয়ে যায়। এ সময় তার সহযোগী সিজেন খান ওরফে আব্দুল কাইয়ুম ও এক পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনসহ আটক করা হয়। সেখানে উপস্থিত তিন পরীক্ষার্থী দৌড়ে হলে প্রবেশ করে। পরে ওই চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুছ ছালাম মিয়া বলেন, আটক দুজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।
১০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বলিহার ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে ১০ শিক্ষক আর কখনো পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। শিক্ষকরা হলেন প্রশান্ত বাড়ৈ, মনিরা খানম, মনির হাওলাদার, কবিতা কির্ত্তনীয়া, অশোক জয়ধর, শামীম আহম্মেদ, মোহসিন তালুকদার, লায়েকউজ্জামান, নিয়াজ মকদুম ও জয় প্রকাশ বিশ্বাস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিলাল হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ১০২, ১০৩ ও ১০৪ নং রুমে এই শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের নকলে সহায়তা করছিলেন।
ইউএনওকে লাঞ্ছিত করায় : শনিবার এসএসসি গণিত পরীক্ষা শেষে যাদুরচর কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ইউএনওকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্কুলের একটি কক্ষে। ইউএনওর গাড়িও ভাঙচুর করে। সে ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় দেড় শ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একই প্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ময়নাল হক। কেউ গ্রপ্তার হয়নি। রৌমারী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিসি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
মিসাইল গ্রুপের সাব্বির আটক : র্যাবের একজনকে ধরল র্যাব : র্যাব-২ গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীচক্রের সদস্য সন্দেহে সাব্বির আহম্মেদ নামের একজনকে আটক করে। সাব্বিরের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ। বাবার নাম সইজ উদ্দিন শেখ। র্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফিরোজ কাউসার বলেন, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সাব্বিরকে আটক করা হয়। সে ধামরাই সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। সাব্বির হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়াও ফেসবুকের মিসাইল ও আইসিটি গ্রুপের সদস্য। মিসাইল গ্রুপের অ্যাডমিনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে সে পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করত। বিকাশের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করত।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক।