অনলাইন ডেস্ক: পাঁচ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ বাণিজ্য, গরুর বিট ও হাট থেকে চাঁদাবাজি, টিআর-কাবিখা প্রকল্পসহ থোক বরাদ্দে নানা অনিয়ম এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়েছেন এমপি আব্দুল ওদুদ। ওই টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও ঢাকায় গড়ে তুলেছেন আবাসিক ভবন, ফিলিং স্টেশন, অটো রাইস মিল, শিশু পার্ক, মার্কেটসহ বহুতল ভবন। বাস-ট্রাকের পাশাপাশি বিলাসবহুল একাধিক গাড়িও রয়েছে তাঁর। চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এই সংসদ সদস্যের নাম। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ওই তালিকা পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে পুনর্বাসন, স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তির সন্তানকে দলীয় মনোনয়নদান, অন্যের জমি দখলসহ নানা অভিযোগে এখন মারাত্মক ভাবমূর্তি সংকটে আছেন এমপি ওদুদ। গত পাঁচ বছরে তাঁর বৈষয়িক উন্নতিতে বিস্মিত দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি ওদুদ বলেছেন, তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দল ও দলের বাইরের কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় আব্দুল ওদুদ তাঁর পেশা হিসেবে ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেন। তবে মূল পেশা ব্যবসা থেকে তিনি বার্ষিক আয় দেখান মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কৃষি খাত, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখান ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ৩০ বিঘা ও স্ত্রীর নামে ছয় বিঘা কৃষি জমি, সোয়া ১১ বিঘা অকৃষি জমি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি দালানবাড়ি, রাজশাহী শহরে একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেন। এর বাইরে নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে ৯০ লাখ টাকা, একটি জিপ গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকে তাঁর পৌনে দুই কোটি টাকা ‘সিসি লোন’ থাকার তথ্য দেন।
জানা গেছে, হলফনামায় প্রদর্শিত ওই অর্থ-সম্পদের সঙ্গে এমপি ওদুদের বর্তমান সম্পদের বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনা একটি জিপ ছাড়াও এখন তাঁর গাড়ির সংখ্যা চারটি। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন জেলখানার মোড়ে সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনে সেখানে গড়ে তুলেছেন তিন তলাবিশিষ্ট মার্কেট ও আবাসিক ভবন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের দক্ষিণ শহরে প্রায় ৪০ বিঘা জমির ওপর নিজ নামে গড়ে তুলেছেন পার্ক। এই পার্ক নির্মাণের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জমি দখল ও ভয় দেখিয়ে অল্প মূল্যে কিনে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই পার্কের কিছুটা দূরেই ‘নাহালা অটো ব্রিকস’ নামে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইটভাটা তৈরি করছেন ওদুদ। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ঘোড়াস্ট্যান্ডে একটি ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করেছেন তিনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে স্থাপিত ‘নাহালা ফিলিং স্টেশনটি’ উদ্বোধন করা হয় মাস তিনেক আগে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওদুদের পরিবহন ব্যবসাও রয়েছে। তাঁর মালিকানাধীন ‘বিশ্বাস ট্রাভেলস’-এর একটি বাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটে চলাচল করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লুত্ফর রহমান ফিরোজ জানান, দেড় বছর আগে তাঁদের সমিতির সদস্য হয়েছেন এমপি ওদুদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, এমপি ওদুদ তাঁদের সমিতিরও সাধারণ সদস্য। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ফিলিং স্টেশনের তেলের একটি লরিসহ ওদুদের ট্রাকের সংখ্যা ছয়টি।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ওদুদ বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কাছ থেকে রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট ঢালান এলাকায় ১১ কাঠা জমি লিখিয়ে নেন। সেখানে মোট ২২ কাঠা জমির ওপর এখন তিনি বহুতল ভবন বানাচ্ছেন। ওই জমির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া মহানগরীর রাজারহাতায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে বছরখানেক আগে তিনি ছয়তলা আবাসিক ভবন এবং নওদাপাড়া পোস্টাল একাডেমির কাছে প্রায় এক বিঘা জমির ওপর একতলা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকার মগবাজার মোড়ে একটি আবাসিক ভবন কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া রাজধানীতে ওদুদের একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা।
আব্দুল ওদুদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায় না কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলে, সদর উপজেলার বালুগ্রাম ডিগ্রি কলেজ, সিটি কলেজ, আমনুরা বুলন্দ শাহ কলেজ, কৃষ্ণগোবিন্দপুর কলেজ, শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত পাঁচ বছরে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক-কর্মচারী পদে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছেন এই সংসদ সদস্য। একেকটি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রার্থীদের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমপি ও তাঁর লোকজন। এর বাইরে সীমান্তে গরুর বিট অনুমোদনের নামে এবং অনুমোদিত বিট থেকে চাঁদা আদায়, টেন্ডারবাজি, টিআর-কাবিখা প্রকল্পসহ এমপিদের জন্য থোক বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, আব্দুল ওদুদের দুর্নীতি ও সম্পদের খতিয়ান এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। ওদুদের যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ। তিনি আরো বলেন, ‘কখনোই আওয়ামী লীগের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন না ওদুদ। আর এ কারণেই দল চালান নিজের মতো করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকা নিয়ে জামায়াত-শিবিরের লোক নিয়োগ দিয়েছেন। টিআর-কাবিখার প্রকল্পগুলোও তিনি নিজেই ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এমপির অনুকূলে বরাদ্দ হওয়া টিআর, কাবিখা ও থোক বরাদ্দের টাকাগুলো কিভাবে ব্যয় হয়েছে, তা অনুসন্ধান করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। অন্যের জমি দখলেও এগিয়ে রয়েছেন এই সংসদ সদস্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ঝিলিম রোডে বাবলু ও তাঁর ভাইয়ের নামে থাকা পাঁচ কাঠা জমি দখল করে দুই বছর আগে ব্যক্তিগত কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ওদুদ। আদালতের নির্দেশে পুলিশের সহায়তায় মাস দুয়েক আগে সেই জমিটি তাঁর কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে পেরেছে জমির মালিকরা।’
মাদক কারবারে পৃষ্ঠপোষকতা : সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় মাদক কারবারি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে জেলা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা ওই তালিকায় ৪৩ জন মাদক কারবারি এবং এদের পাঁচজন পৃষ্ঠপোষকের নাম রয়েছে। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এমপি আব্দুল ওদুদের নাম। সদর মডেল থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা এমন তালিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
দলে একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ‘অনুপ্রবেশ’ : বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল ওদুদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। মামলা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বিএনপি-জামায়াতের নেতারা এখন এমপির কাছের লোক। দলের অনেকের মত উপেক্ষা করে ওদুদ দলে নিয়েছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাদের, যাঁরা একাধিক নাশকতা মামলার আসামি। এক ডজনেরও বেশি নাশকতার মামলার আসামি জামায়াতের রুকন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সোহরাব আলী ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর এমপি ওদুদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একই দিন যোগ দেন জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আফরোজ জুলমাত, জামায়াতের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, বিএনপি নেতা মসিদুল হক মাসুদসহ আরো অনেকে। একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগে যোগ দেন একাধিক নাশকতা মামলার আসামি জামায়াত নেতা ও বারঘোরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তাঁদের অনেকেই পেয়েছেন পদ-পদবি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ কেউ আবার বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। ২০১৭ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতাকে উপেক্ষা করে সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি থেকে বছরখানেক আগে যোগ দেওয়া বারঘোরিয়া ইউনিয়নের নেতা আবুল বাসারকে। ২০১৬ সালে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় ‘রাজাকার’ হুমায়ন দারোগার ছেলে সাবেক বিএনপি নেতা আলমগীর কবীরকে। একইভাবে ইসলামপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া জসিম উদ্দিনকে। অথচ ওই নির্বাচনে এমপি ওদুদের আর্শীবাদপুষ্ট দুই বিএনপি নেতাই ধরাশায়ী হন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন জামায়াত-বিএনপির নেতাদের নিয়েই দল চলছে। আলবদর নেতাকে নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছেন এমপি ওদুদ। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে!’
এমপি আব্দুল ওদুদের বক্তব্য : নিয়োগ বাণিজ্য, গরুর বিটে চাঁদাবাজি ও টিআর-কাবিখায় অনিয়ম প্রসঙ্গে এমপি আব্দুল ওদুদ বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বিরোধীরা তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এসব অপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন সরকারিভাবে সব নিয়োগ হচ্ছে। সেখানে এমপিদের হস্তক্ষেপ করার তেমন সুযোগ নেই। আর টিআর-কাবিখায় যাদের নামে প্রকল্প দেওয়া হচ্ছে, অনিয়ম করলে তারা করতে পারে। গরুর বিটের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, তাই চাঁদাবাজির প্রশ্নই ওঠে না। বরং আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি মঈনুদ্দীন মণ্ডল ডিড করে গরুর বিটের পার্টনার হয়েছেন বলে জানান তিনি।
গত পাঁচ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া প্রসঙ্গে এমপি বলেন, বর্তমানে রূপালী, সাউথইস্ট ও বেসিক ব্যাংকে তাঁর ছয় কোটি টাকা ঋণ আছে। এসব টাকায়ই রাজশাহী কোর্ট ঢালানের জায়গায় ভবন তৈরি করছেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরের ফিলিং স্টেশনও নির্মাণ করেছেন ব্যাংকের টাকায়। একটি বাস ও দুটি ট্রাক রয়েছে তাঁর। এর বাইরে ‘বিশ্বাস ট্রাভেলস’ নামে যে ট্রাকগুলো চলছে, তা তাঁর নয়। সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রাকগুলো চালাচ্ছেন। হায়েস মাইক্রেবাস দুটিও তাঁর নয়। রাজশাহীতে পোস্টাল একাডেমির সামনে নির্মিত মার্কেটের একক মালিক তিনি নন। তাঁর এক ভাইও অংশীদার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ শহরে নির্মিত ওদুদ পার্কের জায়গাটি পৈতৃক জমি। পার্ক নির্মাণে জমি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে রাজধানীর মগবাজারে তাঁর একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, সামনে সংসদ নির্বাচন, তাই দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তাঁকে হেয়পতিপন্ন করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মাদকের পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় নাম থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল ওদুদ জানান, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। কখনো তিনি কোনো মাদক কারবারিকে তিনি প্রশ্রয় দেননি কিংবা কাউকে ছাড়ানোর জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তদবির করেননি।
দলের কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের জায়গা না দেওয়ার বিষয়ে এমপি ওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগের যাঁরা জনবিচ্ছিন্ন নেতা, তাঁরা দলে পদ পাননি। যোগ্য ও রাজনীতির মাঠে থাকা নেতারা সবাই পদ পেয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাদের আওয়ামী লীগে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ভোটব্যাংক ভাঙার জন্যই তাঁকে আওয়ামী লীগে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ জন্যই বিএনপি-জামায়াত নেতাদের মধ্যে ভোট টানার মতো কিছু নেতাকে তিনি দলে নিয়েছেন। আর এসব কারণে সদর উপজেলায় ভোটের রাজনীতিতে আজীবন তৃতীয় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ এখন প্রথম স্থানে চলে এসেছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ।