রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের সামনে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) এর আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫ জন।
পাহাড়ি দুই আঞ্চলিক দলের এই শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাসহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির।
তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নানিয়ারচর উপজেলায় আঞ্চলিক দুইটি দলের শীর্ষ দুই নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমরা সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এ দুই নেতা হত্যায় এখনও পর্যন্ত তাদের পরিবার কিংবা নিজ দলের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
এদিকে পাহাড়ে এ দুই আঞ্চলিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে হত্যার অভিযোগে ইউপিডিএফকে (প্রসিত) দায়ী করছেন সংগঠন দুইটির নেতরা। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ইউপিডিএফের (প্রসিত) শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন চাকমা বলেন, শক্তিমান চাকমাকে হত্যার পর তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ইউপিডিএফ (প্রসিত) একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা বলেন, আগে থেকেই আমাদের দলের শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে ইউপিডিএফের (প্রসিত) সন্ত্রাসীরা। তারা পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবাহ্যত রাখার জন্য মূলত এমন হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।
অপরদিকে তাদের এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট মন্তব্য করে ইউপিডিএফের (প্রসিত) অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, আমরা মানুষ হত্যায় বিশ্বাসী নয়। কোনো মানুষ এভাবে মৃত্যুবরণ করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। এ সকল ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরও বলেন, তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার কোনো দল নেই। সে একজন সন্ত্রাসী। সন্ত্রসী হওয়ার ফলে তার অনেক শত্রু থাকতে পারে। তারাই এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা।
অন্যদিকে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনাকে তাদের নিজ দলের কাজ বলে মন্তব্য করে মাইকেল চাকমা বলেন, শক্তিমানের অনেক আগে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিলো। যার প্রমাণ আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে পেয়েছি। আমরা শুনতে পেয়েছি বেশ কয়েকদিন আগে এক ইউপি সভায় দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কথা ভাবছিলেন শক্তিমান। নিজ দলের ক্ষতি কেউ চাই না। সেজন্য তারা নিজেরা এমন কর্মকাণ্ড করতে পারে বলে আমি মনে করি।
এছাড়া আঞ্চলিক রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে তারা কথা বলছে বলেও মন্তব্য করেন এই শীর্ষস্থানীয় নেতা।