ন্যাশনাল ডেস্ক: মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের নামে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ ঘটছে অভিযোগ করে তা বন্ধের দাবি উঠলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে সমাজবিরোধী উপাদান থেকে মুক্ত করতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বুধবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় সারা দেশের আইনজীবীদের সম্মানে গণভবনে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৪ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে গুলিতে ১৫০ জনের মতো নিহত হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবির ও মানবাধিকারকর্মীরা শুরু থেকেই এভাবে প্রাণহানির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সব ধরনের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। দেশে অবিচার ও অন্যায়ের কোনো স্থান নেই।’
‘আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করা, আর যে কোনো নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া খুব কঠিন কাজ না।’
‘যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সরকার সম্পন্ন করেছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।’
‘বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধিশালী ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমরা।’
‘যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। আমাদের সরকারের নীতি আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।’
তিনি আরও জানান, ‘কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য জি-৭ গ্রুপের দেশগুলো আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমি কাল সেখানে যাচ্ছি। তারা বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পেছনে কী জাদু আছে, তা তারা জানতে চায়।’
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেফতার করার পর আইনজীবীসহ যারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সেই সময় আপনাদের যে সমর্থন পেয়েছি সেটাই ছিল আমার শক্তি। আমি এদেশে আসার পর থেকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করেছি।’
‘আল্লাহর রহমতে আমি এটুকু বলতে পারি, সকল বাধা অতিক্রম করে আবার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে আমরা যে নির্বাচন জয়ী হয়েছিলাম এর ফলে দেশের উন্নতি হয়েছে।’
ইফতারের আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন টেবিল ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ইফতারের আগে দেশ ও জাতির অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সাবেক বিচারপতি মেসবাহ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, গাজীপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, দিনাজপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন, শরীয়তপুর জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ও লালমনিরহাট জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সূত্র: ইউএনবি, বাসস।