ডেস্ক রিপোর্ট: নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে করে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই।আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসাইন হায়দার। এর আগে গত ২১ নভেম্বর শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। গত ২০ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছিল।আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।আদালতের আদেশের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিলে খালেদা জিয়ার আপিল ডিসমিস (বাতিল) করা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, এ মামলায় জিতব। কেননা, এ মামলায় প্রথম চুক্তি করেছিলেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া সরকার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিল। অথচ একই অভিযোগে শেখ হাসিনাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’‘কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলছে। আইন অনুযায়ী, কোনো মামলার মূল আসামি যদি খালাস পেয়ে যায়, তাহলে অন্য আসামিরাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে খালাস পেয়ে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে আপিল বিভাগ বলেছে, মামলার মেরিটে আমরা হাত দেব না। আপনারা যখন রিটে আসবেন, তখন বেনেফিট (সুফল) পাবেন।’২০১৫ সালের ১৮ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।গত বছরের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন বিচারিক আদালত।এরপর ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন খালেদা জিয়া।হাইকোর্টের রায়ে সচল হওয়ার পর নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম ফের শুরু হয় ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে।কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ১৮ জুন তা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
পূর্ববর্তী পোস্ট