দেশের খবর: ৬০ লাখ পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে দেশব্যাপী চলছে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প। নতুন করে প্রকল্পের আওতায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন কাজ অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় একসঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি ভিক্ষুক পুনর্বাসন কাজ করা হবে।
ফলে প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধন আনা হবে। দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ দেওয়া হবে। এছাড়া ভিক্ষুকদের ক্ষুদ্র ব্যবসা, গরু-ছাগল কেনাসহ আয়বর্ধক কাজে ঋণ দেবে সরকার।
ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে ভিক্ষুকমুক্ত হয়েছে উপজেলাটি। ২০১৪ সালের ৫ জুলাই ‘ভিক্ষুকমুক্ত কিশোরগঞ্জ উপজেলা’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান।
এই উপজেলায় ৯৫১ জন ভিক্ষুককে চিহ্নিত করে মোট ১২টি সমিতিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী তহবিল গড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে উপজেলা প্রশাসন প্রত্যেকটি ভিক্ষুকের জন্য ৪ হাজার ৬শ’ টাকার ফান্ড সংগ্রহ করে। এর সমপরিমাণ টাকা বোনাস হিসেবে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্প থেকে দেওয়া হয় প্রত্যেক ভিক্ষুককে। ১২টি সমিতিতে ৩৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে। ঋণ গ্রহীতাদের ৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে।
এখন কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে এখন কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি ও পশুপালনে ব্যস্ত। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকার। দারিদ্র্যতার পাশাপাশি দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে চায় সরকার।
ভিক্ষুকদের প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে আবারও সংশোধন আনা হবে। এই বিষয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সারাদেশের ভিক্ষুকদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি অতি দরিদ্রপ্রবণ এলাকায় প্রকল্পের কাজের পরিধি আরও বিস্তার করা হবে। তবে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় কত বাড়বে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক নজির আহমদ বলেন, দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হবে। এই লক্ষ্যে প্রকল্পটি আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা পাইলট প্রকল্পটি হিসেবে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে পেরেছি। এরই আলোকে সারাদেশের সব ভিক্ষুককে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে দারিদ্র্যের হার এক নয়।
ফলে যেখানে দারিদ্র্য বেশি ওইসব এলাকায় প্রকল্পের কাজ আরও প্রসারিত করা হবে। বিশেষ করে নদীভাঙন, পাহাড়ি, উত্তরবঙ্গ এলাকায় প্রকল্পের কার্যক্রম বাড়নো হবে।
প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তৃণমূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করা, তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া, সদস্য সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থবোনাস দেওয়া, সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পুঁজি গঠনে সহায়তা করা ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করাসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা।
এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প’ হাতে নেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রকল্পটি ফের চালু করা হয়। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় ৪৮৫টি উপজেলায় ৪৫০৩টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫২৭টি ওয়ার্ডে প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে।
ওয়ার্ডগুলোর অধীনে প্রতিটি গ্রামে ৬০টি গরিব পরিবারের সমন্বয়ে একটি গ্রাম-উন্নয়ন সমিতি গঠন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২৫ লাখ দরিদ্র পরিবার এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রকল্পের আওতায় সরকার ৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় করছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের আওতায় ঋণ দিয়ে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ। এসব পরিবারের মূলধন এখন ৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। যেখানে সরকার মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। একজন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। একবার পরিশোধ করে পুনরায় ঋণ নিতে পারবেন।
প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আকবর হোসেন বলেন, প্রকল্পের আওতায় ঋণ নিয়ে প্রতি মাসে স্বাবলম্বী পরিবারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দরিদ্রতা নিরসনে সারাদেশে প্রকল্পের কার্যক্রম সফলভাবে চলছে। আরও অধিক মানুষের দরিদ্রতা নিরসনে প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে।