হাফিজুর রহমান মাসুম: এখন বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। সোসাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা, রেকর্ড, স্মৃতি রোমন্থন সবই চলছে। এই সময়ে এসে ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ঘটনার কথা লিখতে ইচ্ছে করছে।
আজ ২৯ জুন। ১৯৫৮ সালের এই দিনে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। সেই বিশ্বকাপেই ফুটবল পেয়েছিল তার সর্বকালের সেরা সন্তানকে। বলছি পেলের কথা। ফুটবল খেলার সাথে “The Beautiful Game” কথাটি সম্পৃক্ত হয় তারই কারণে। একবার পেলে নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলেন। সে সময় নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছিলো। শুধুমাত্র পেলেকে দেখার জন্য নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিবদমান দলগুলো ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল! ফুটবলের রাজা কালোমানিক পেলের কথাই বলব আজ।
ফুটবল ইতিহাসে অনেক বিস্ময়কর প্রতিভার আগমন ঘটেছে। তারা তাদের নৈপুণ্য ও দক্ষতা দিয়ে এই বিউটিফুল গেমকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার দলে পেলের সাথে কাকে নেবেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। আমি কোন দ্বিধা ছাড়াই বলব- ফেরেন্স পুসকাস। অসামান্য এই খেলোয়াড় হ্যাঙ্গেরি জাতীয় দলের হয়ে ৮৫টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৮৪টি। ম্যাচ প্রতি গোলের হিসাবে তারচেয়ে ভালো রেকর্ড ফুটবলা বিশ্বে একমাত্র তারই সহ-খেলোয়াড় স্যান্ডর ককসিসের। পুসকাস, ককসিস, হিদেকুটিদের নিয়ে ২-৩-৩-২ ফরমেশনে খেলা ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স নামে খ্যাত এই অসামান্য দলটি হাঙ্গেরি জাতীয় দলের হয়ে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ এই ছয় বছরে বিশ্বের বড় বড় সব দেশকে হারিয়েছিল বিশাল বিশাল ব্যবধানে। এই সময়ে তারা ৫০টি ম্যাচ খেলে ৪২টিতেই জয়ী হয়, ৭টি ড্র করে। একমাত্র পরাজয় ১৯৫৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে, যাদেরকে তারা একই বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ম্যাচে ৮-৩ গোলে হারিয়েছিল। ১৯৫৬ সালের হ্যাঙ্গেরি বিপ্লব এই দলকে আর এগোতে দেয়নি। ফুটবলে তাদেরকে একমাত্র ‘গোল্ডেন টিম’ বলা হয়। টোটাল ফুটবলের প্রাথমিক ধারণা এই দলটিই সফলতার সাথে মাঠে প্রয়োগ করেছিল। যা পরে রাইনাশ মিশেলের কোচিং-এ ইয়োহান ক্রুয়েফ হল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে তিনি এটি বার্সেলোনাতে প্রয়োগ করেন।
বলতে হবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা। তার শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে অসংখ্যবার প্রশ্ন উঠেছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন। হাত দিয়ে গোল করে বিতর্ক ছড়িয়েছেন। কিন্তু তার প্রতিভা এবং ফুটবল মাঠে বল পায়ে অবিশ্বাস্য সব কীর্তি নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টাইন ফুটবলকে তিনি জনপ্রিয় করেছেন তার পায়ের যাদু দিয়ে। অনেকেই তাকে পেলের পাশাপাশি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলেও মনে করেন। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তার উপর ভর করেই আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জেতে।
ইউরোপে অনেকেই দুইবারের ফিফা ব্যালন ডি’ অর জয়ী ক্রুয়েফকেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার মনে করেন। বর্তমান বিশ্বে ল্যাটিন এবং ইউরোপিয়ান ঘরানার যে মিশ্র ধরনের ফুটবল জনপ্রিয় হয়েছে মাঠে তার প্রবর্তক ক্রুয়েফ। আয়াক্স আমস্টার্ডাম ক্লাবে ও নেদারল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলোয়াড় হিসেবে এবং বার্সেলোনায় কোচ হিসেবে ক্রুয়েফ যে টোটাল ফুটবলের বিকাশ ঘটান তার ফল বর্তমান স্প্যানিশ ফুটবল।
এক প্রজন্মের খেলোয়াড়কে পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়ের সাথে জনপ্রিয়তা দিয়ে তুলনা করা সম্ভব নয়। স্বভাবতই বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়ের খেলা দেখে অভ্যস্ত দর্শকরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দেরই সর্বকালের সেরা মনে করেন। আমাদের তাই রেকর্ড এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডি স্টেফানোর কথা বলতেই হয়। বিশ্বকাপ না খেলা এই আর্জেন্টাইন গ্রেট রিয়েল মাদ্রিদের হয়ে ৫টি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছেন। তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার।
লিওনেল মেসি ইতিমধ্যেই ক্লাব ফুটবলের প্রায় সবকিছু অর্জন করেছেন নিজ পায়ের যাদুতে। তিনি ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন অনেক আগেই। গত বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জয়ী এই জিনিয়াস গতবার শিরোপর খুব কাছাকাছি গিয়েও জয় করতে পারেননি বিশ্বকাপ। তবে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোলের রেকর্ড তার থাকলেও ৬৫টি গোল করতে তিনি প্রায় দ্বিগুণ ১২৭ টি ম্যাচ খেলেছেন। এটিকে তার অন্যতম দুর্বলতাও মনে করা হয়। ক্যারিয়ারে তার একমাত্র অধরা বিশ্বকাপ শিরোপাটি জয় করতে সম্ভবত শেষবারের মত খেলছেন তিনি।
টানা তিরবার রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, পর্তুগালকে ইউরোপিয়ান কাপ জেতানো, ইউরোপরে দেশগুলোর মধ্যে জাতীয় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ গোলের রেকর্ডধারী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অসাধারণ প্রতিভাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রিয়াল মাদ্রিদে ইতিমধ্যেই সর্বকালের সেরার তালিকায় নাম লেখানোর পথে ২৯২ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৩১১টি! ক্যারিয়ারের একমাত্র অপ্রাপ্তি বিশ্বকাপ জয়ের জন্য তিনিও আছেন রাশিয়াতে।
সর্বকালের সেরার তালিকায় অবশ্যই নাম আসবে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জয়ী এবং পরের বার পেলের অনুপস্থিতিতে গ্যারিঞ্চাকে নিয়ে ১৯৬২-তে ব্রাজিলকে টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা এনে দেয়া ডিডির।ব্রাজিলিয়ানদের অনেকের মতে তাদের সর্বকালের অন্যতম সেরা ১৯৬২ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল এবং বুট দুটোই জেতা আধুনকি ড্রিবলিং এর প্রবর্তক গ্যারিঞ্চা, ব্রাজিলিয়ান গ্রেট দ্যা ফেনোমেনন রোনাল্ডো, রোনালদিনহোসহ অনেকেই এই অসাধারণ খেলায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন নিজেদের সময়ে। ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জিনেদিন জিদান, পাওলো মালদিনির ফুটবল প্রতিভাও আমরা ভুলতে পারব না কখনও।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা পেলেকেই সর্বকালের সেরার স্বীকৃতি দিচ্ছি ইতিহাসের একমাত্র কমপ্লিট ফুটবলার হিসেবে। মাঠের খেলা, রেকর্ড আর খেলোয়াড় হিসেবে তার আচরণ- সবমিলিয়ে তিনি সকলকে ছাড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবলার নির্বাচনের জন্য ফ্রান্সের সাপ্তাহিক ‘ফ্রেঞ্চ ফুটবল’ ১৯৯৯ সালে তাদের ‘ব্যালন ডি অর’ জয়ীদের নিয়ে একটি ভোটের আয়েঅজন করে। ৩৪ জন বিজয়ীর মধ্যে ম্যাথিউস, সিভরি এবং বেস্ট ভোট দানে বিরত থাকেন। লেভ ইয়াসিন তখন বেঁচে ছিলেন না। বাকি ৩০ জন এতে ভোট প্রদান করেন। ৩০জন ভোটারকে শতাব্দীর সেরা ৫ জন সেরা খেলোয়াড়কে বেছে নিতে বলা হয়। প্রথম স্থানের জন্য ৫, দ্বিতীয় স্থানের জন্য ৪, তৃতীয় স্থানের জন্য ৩, দ্বিতীয় স্থানের জন্য ২ এবং পঞ্চম স্থানের জন্য ১ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। ফলাফলের সার সংক্ষেপ হলো-
১. পেলে( সতের জন তাকে প্রথম স্থান দেন)-১২২ পয়েন্ট
২. ম্যারাদোনা (তিন জন তাকে প্রথম স্থান দেন)-৬৫ পয়েন্ট
৩. ক্রুয়েফ (এক জন তাকে প্রথম স্থান দেন)-৬২ পয়েন্ট
৪. ডি স্টেফানো (চার জন তাকে প্রথম স্থান দেন)-৪৪ পয়েন্ট
(এই তালিকায় রোনাল্ডো, রোনালদিনহো, সি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সঙ্গত কারণেই বিবেচনায় ছিলেন না। )
আসুন জেনে নেয়া যাক কেন পেলে সর্বকালের সেরা–
ব্রাজিল দলের সাইকোলজিস্ট Dr Joao Carvalhaes ১৯৫৮ বিশ্বকাপের আগে দেয়া তার রিপোর্টে মাত্র ১৭ বছর বয়সী পেলেকে বিশ্বকাপ দলে না নিতে লিখিত রিপোর্ট পেশ করেন। তার যুক্তি ছিল বালক পেলে বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। কারণ সে অত্যন্ত নবীন। গ্যারিঞ্চাকেও দলে না নেয়ার সুপারিশ করেন তিনি। কিন্তু ব্রাজিলের কোচ ভিসেন্তে ফেওলা ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। তিনি শুনতেন সবার কথা, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতেন নিজের মত। তিনি সাইকোলজিস্টকে বললেন, “হয়ত তুমি তোমার জায়গায় ঠিক। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে তুমি ফুটবলের কিছুই বোঝ না। যদি পেলের হাঁটু ঠিক থাকে, সে খেলবে। ”
সর্বকালের অন্যতম সেরা এবং আধুনিক ফুটবল খেলার ধরনটাই যিনি বদলে দিয়েছেন সেই টোটাল ফুটবলের মহানায়ক ক্রুয়েফ পেলেকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে- “the only player who surpassed the boundaries of logic”.
যেকোনো খেলার সাথে নিজেকে সমার্থক বানিয়ে ফেলার এই গুণটি অর্জন করা একটা বিশেষ কিছু। ফুটবলে এই গুণটি কার মাঝে আছে? ফুটবল সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষও পেলের নাম অন্তত শুনেছেন। ফুটবলে শুধু একজনের নাম নিতে হলে পেলের নামই আসবে। পরিসংখ্যানগতভাবে হয়তো পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব (যদিও সেটাও অনেক কঠিন কাজ), কিন্তু আবেগ বা হুজুগ বাদ দিয়ে ইতিহাস এবং খেলার মাঠের কীর্তি বিবেচনায় পেলের জায়গা অন্য কাউকে দেয়া সম্ভব নয়।
পেলের ক্যারিয়ারে বড় ধরনের কোনো ব্যর্থতা নেই; সফলতার জন্য গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, ব্যর্থতার জন্যও তেমনই ক্যারিয়ারে কালো দাগ পড়ে।
সর্বকালের সেরা বিচার করার সময় আবেগ সরিয়ে সবাইকে বাস্তববাদীও হতে হবে। পেলে সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলেছেন ১৯৭০ সালে, এতদিন পরেও বিশেষজ্ঞদের যেকোনো তালিকায় প্রথম নামটা পেলেরই থাকে। ২য় থেকে ১০ম ক্রমে অনেক নাম পরিবর্তন হয়। পক্ষে কিংবা বিপক্ষে অনেক যুক্তিই দেখানো যাবে, কিন্তু এক নম্বরটা অপরিবর্তিতই রয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতেই সবার চেয়ে অনেক খানি এগিয়ে থাকেন পেলে। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই বছর IFFHS (International Federation of Football History & Statistics) এর তত্ত্বাবধানে সাবেক খেলোয়াড় আর সাংবাদিকদের ভোটে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। তাতে ১৭০৫ ভোট পেয়ে পেলে প্রথম হন, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রুয়েফ পান ১৩০৩ ভোট।
‘কালো মানিক’ খ্যাত পেলেকে বলা হয় ফুটবলের সম্রাট। শুধু ফুটবলারই নন, জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী এক যোদ্ধার নাম পেলে।
ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে জন্ম পেলের, সঠিকভাবে বললে ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। দরিদ্র পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে অভাব অনটন মেটানোর জন্য ছেলেবেলাতেই পেলেকে চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়। এর সাথে রেলস্টেশনে ঝাড়ু দেবার পাশাপাশি কিছুদিন জুতা পরিষ্কার করার কাজও করেছিলেন। পেলের পুরো নাম ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্তো’। নামটা রাখা হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের নামের সাথে মিল রেখে।
ফুটবলে সহজাত প্রতিভা ছিল তার। ফুটবল কেনার টাকা ছিল না বিধায় মোজার ভেতরে কাগজ ঠেসে বানানো ফুটবলে চালাতেন অনুশীলন। ব্রাজিলের অন্যান্য খেলোয়াড়ের মতোই গলির ফুটবলে পেলের প্রতিভা ফুটে উঠে। কিন্তু উপরওয়ালার দয়াতেই হয়তো মাত্র ১৫ বছরের পেলের উপর নজর পড়ে সান্তোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর। তা না হলে হয়তো তার প্রতিভা গলিতেই সীমাবদ্ধ থাকতো। ব্রিটো পেলেকে গলি থেকে নিয়ে যান সান্তোস ক্লাবে এবং সান্তোসের ‘বি’ টিমে তাকে সুযোগ দেন। এখানেও সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মাঝে সান্তোসের মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন তিনি।
পেলে সান্তোসের মূল দলে যোগ দেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। অভিষেকেই ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লীগে লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। সেবারের ব্রাজিলিয়ান লীগে পেলের পারফরম্যান্স এতটাই নজরকাড়া ছিলো যে, তা স্বয়ং ব্রাজিল সরকারেরও চোখ এড়ায়নি। পেলের এই পারফর্মেন্স তাদের কাছে অমূল্য হিসেবে বিবেচিত হলো। তাই আইন করে পেলেকে ব্রাজিলের জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল! রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো জায়ান্টরা তাকে দলে নিতে চাইলেও সরকারের অনুরোধে ইউরোপিয়ান লীগে পেলের কোনো দিন খেলা হয়নি।
পেলের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য ‘পেলে ল’ নামে একটি আইন ব্রাজিলে কার্যকর হয়েছে ২০০১ সালে ব্রাজিল ফুটবলে দুর্নীতির বিচারের জন্য!
অসাধারণ ব্যক্তি হিসেবেও পেলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তখন ইউরোপে খেললে স্বাভাবিকভাবেই অনেক টাকা আয় করা যেত, কিন্তু সরকারের অনুরোধে দেশের স্বার্থে সেটা হাসিমুখে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। পেলে ভুলে যাননি তার নিজের দারিদ্র্যে ভরা শৈশবকেও, ব্রাজিলের দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করতে খেলোয়াড়ি জীবনেই গড়েছেন বিশেষ ফাউন্ডেশন। আর খেলা ছাড়ার পর কখনো ইউনিসেফের বিশেষ দূত, কখনো জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত, কখনো বা ব্রাজিলের ‘বিশেষ’ ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন তাদের সাহায্য করতে।
১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিংশ শতাব্দীর ১০০ জন সেরা মানুষের তালিকায় জায়গা পান পেলে।
ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সময়টা ছিল ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই। সেই ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে গেলেও প্রথম ম্যাচেই বিশ্বরেকর্ডটি করতে ভুল করেননি পেলে। ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গোল করে তিনি অর্জন করেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড। পুরো ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৯২টি হ্যাট্রিক, ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭৭ গোল), ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮৩ গোল- এই পরিসংখ্যানগুলো তার অর্জনের খুব সামান্যটুকুই বোঝাতে পেরেছে।
পেলের যুগে ইউরোপিয়ান নন এমন খেলোয়াড়দেরকে ‘ব্যালন ডি অর’ সম্মাননা দেয়ার নিয়ম ছিল না। ২০১৬ সালে ব্যালন ডি অর এর ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৯৫ সালের আগ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান নন এমন খেলোয়াড়দেরকেও বিবেচনায় এনে নতুন করে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এখানে পূর্ববর্তী ৩৯টি ব্যালন ডি অর-এ ১২টি পরিবর্তন হয়। ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৬৪ আর ১৯৭০ এই সাত বারের ব্যালন ডি অর জয়ী ঘোষণা করা হয় পেলেকে। তবে সম্মানের জন্য আগের খেলোয়াড়দের নামও রাখা হয়।
তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র খেলোয়াড় পেলে, এই একটি কথাই তার অর্জনকে অনেক উপরে তুলে দেয়। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই ফেভারিট হিসেবে যাত্রা করে ব্রাজিল। কিন্তু পেলে আসার আগে ২৮ বছর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি তারা। পেলে যাওয়ার পরেও পরবর্তী বিশ্বকাপ জেতে ২৪ বছর পরে। আপনি যখন জানবেন, চারটি বিশ্বকাপে ১৪টি ম্যাচ খেলে ১২টি গোল আর ১০টি অ্যাসিস্ট, দুটি ফাইনালে গোল করার রেকর্ড, চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড- তাহলে পেলে সম্পর্কে আপনার শ্রদ্ধাবোধ আরেকটু বাড়ার কথা। বিশ্বকাপে পেলের অবদানগুলো একনজরে দেখা যাক।
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিলের মতো দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যেনতেন বিষয় নয়। সেই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ে একটি অ্যাসিস্ট দিয়ে শুরু করেন। কোয়ার্টারে ওয়েলসের বিরুদ্ধে পেলের একমাত্র গোলে ব্রাজিল সেমিফাইনালে পৌঁছে। অভিষেকের পরের ম্যাচেই মাত্র ১৭ বছর ২৩৯ দিন বয়সে গোল করে তিনি সবচেয়ে কমবয়সী গোলদাতা হিসেবে যে রেকর্ড করেছিলেন তা আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। ১৭ বছর ২৪৪ দিন বয়সে সেমিফাইনালে ওই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল জ্যা ফন্টেইন এর ফ্রান্সের বিপক্ষে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে করেন হ্যাট্টিক। সেই রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পানেনি। রেকর্ড তিনি আরও একটি করেন ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে দুই গোল করে। তিনিই এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। সেই বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান তারকার পুরষ্কারও জেতেন তিনি। মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলেই তার গোল সংখ্যা ছিল ৬টি। এর মধ্যে ফাইনাল আর সেমিফাইনাল মিলিয়ে করেন ৫গোল।
১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জেতাটা কতটা বিস্ময়কর কী, সেটা বোঝানোর জন্য সর্বকালের সেরাদের পরিসংখ্যান দেখুন-
# ম্যারাডোনা ২২ বছর বয়সে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন।
# রোনালদো ১৮ বছর বয়সে বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ পান। কিন্তু রোমারিও, বেবেতোর ভিড়ে মূল একাদশে জায়গা পাননি।
# জিদান ফ্রান্সের মূল দলেই সুযোগ পান ২২ বছর বয়সে, আর বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ পান ২৬ বছর বয়সে।
# মেসি ১৯ বছর বয়সে বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ পান। কিন্তু সবগুলো ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি।
# ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২১ বছর বয়সে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন।
১৯৬২ সালের বিশ্বকাপ
এই বিশ্বকাপে পেলে তৎকালীন সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি নিয়ে খেলা শুরু করেন এবং আশা করা হচ্ছিল এটা পেলের টুর্নামেন্ট হবে। চিলির বিরুদ্ধে প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করে আর চারজন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে দ্বিতীয় গোল দিয়ে সেই পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু চেকোস্লোভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে বাকি টুর্নামেন্ট মিস করেন।
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের ব্রাজিলের দলকে ধরা হয় তৎকালীন ব্রাজিলের সেরা দল। গ্যারিঞ্চা, গিলমার, সান্তোস, জোয়ারজিনহো, টোস্টাও, গারসেন, আর সাথে পেলে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে পেলে গোল করেন, কিন্তু বুলগেরিয়ান ডিফেন্ডারদের বর্বরোচিত ফাউলে ইনজুরিতে পড়ে পরের ম্যাচ মিস করেন। হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে হেরে যায় ব্রাজিল। কোচ ভিসেন্তে ফিওলা গ্রুপের শেষ খেলায় ইউসেবিওর পর্তুগালের বিপক্ষে যখন পেলেকে নামান, তখন সবাই আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। কারণ তখনও পেলে তার ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেই ম্যাচটাকে ‘৬৬ এর বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ বলে স্বীকার করা হয়। ওই ম্যাচে পুরো ব্রাজিল দল, বিশেষত পেলেকে এত বেশি পরিমাণ ফাউল করা হয় যে, পেলে মাঠ থেকে তো ইনজুরড হয়ে বের হনই, সেই সাথে ম্যাচের পর তিনি অবসরের ঘোষণাও দেন। পরবর্তীতে ইউসেবিও এবং পর্তুগালের সমস্ত টিম মেম্বার অফিসিয়ালি ব্রাজিলের কাছে ক্ষমা চায়।
১৯৭০ এর বিশ্বকাপ
৬৬’র বর্বর আক্রমণে ক্ষোভে-দুঃখে আর কখনও বিশ্বকাপে খেলবেন না বলে ঠিক করেন পেলে। কিন্তু ১৯৬৯ এর শুরুতে পেলেকে আবার দলে নেয়া হয় এবং বাছাইপর্বে তিনি ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৬টি গোল করেন। এই টুর্নামেন্টে পেলে মূলত প্লে-মেকার হিসেবে খেলেন। ফাইনাল ম্যাচে ইতালির বিরুদ্ধে প্রথম গোলটিসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৪টি গোল আর ৭টি অ্যাসিস্ট করে সেই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে নেন তিনি। সাথে বিশ্বকাপ জিতে জুলেরিমে কাপটাকে চিরতরে নিজেদের করে নেন।
ফুটবলে প্রজন্ম একটা বড় বিষয়। এক প্রজন্ম সচরাচর দুটি বিশ্বকাপ ভালো খেলে। কিন্তু পেলে চারটি বিশ্বকাপেই তার যাদু দেখিয়েছেন। বিভিন্ন প্রজন্মের সাথে সুন্দরভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি বিশ্বকাপের শেষে একটি অল ষ্টার দল ঘোষণা করা হয়। পেলে ১২ বছরের ব্যবধানের দুটি দলে (১৯৫৮ ও ১৯৭০) জায়গা পান। এত সময়ের ব্যবধানে এরকম কোনো দলে আর কোনো খেলোয়াড় সুযোগ পাননি।
ক্লাব ফুটবলার পেলে
ক্লাব ফুটবলেও পেলে অসাধারণ ছিলেন। দলগতভাবে ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিতেছেন ২৬টি। ঘরোয়া লীগে ১১ বার সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার।
পেলের সম্পর্কে অনেকে বলেন যে, তিনি ইউরোপীয় ফুটবলে কখনো খেলেননি, যা কিনা তার জন্য একটা সীমাবদ্ধতা। তিনি ইউরোপে খেলেন নি, কিন্তু ইউরোপে তার পারফর্মেন্স বিস্ময়কর। জাতীয় দল ছাড়াও ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে তার পারফর্মেন্স মুগ্ধ করার মতো। পেলের আরো কিছু ম্যাচ আছে ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে। এসব দলের বিপক্ষে ১৩০ ম্যাচ খেলে পেলের গোল ১৪২ টি।
কোপা লিবার্তোদোরেস
ইউরোপের জন্য যেমন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ল্যাটিনের তেমনই কোপা লিবার্তোদোরেস। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে সান্তোস শিরোপা জেতে ১৯৬২ আর ১৯৬৩ সালে। পেলে পরবর্তী যুগে শিরোপা পেতে আবার সময় লাগে ৫৮ বছর। পরবর্তী শিরোপা তারা পায় ২০১১ সালে।
১৯৬২ সালের টুর্নামেন্টে সান্তোস গ্রুপ পর্ব ভালোভাবেই পার করে। গ্রুপের একটা ম্যাচে পেলে দুই গোলও করেন। এরপর ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় উরুগুয়ের অন্যতম সফল ক্লাব পেনারোলের। দুই লেগ মিলিয়ে খেলা ড্র হওয়ায় প্লে অফ ম্যাচ হয়। সেই ম্যাচে পেলের দুই গোলে ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্ট জিতে নেয় সান্তোস।
১৯৬৩ সালের টুর্নামেন্টে সাবেক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সান্তোস সরাসরি সেমিফাইনাল পর্বে খেলে। সেখানে তারা মুখোমুখি হয় গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচে চারটিতেই জয় পেয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকা আরেক ব্রাজিলীয় ক্লাব বোটাফোগোর। দুই লেগের সেমিফাইনালের প্রথমটিতে ঘরের মাঠে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে গোল করেন পেলে। এরপর অ্যাওয়ে ম্যাচে ৪-০ গোলে জেতা ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ফাইনালে সান্তোস মুখোমুখি হয় বোকা জুনিয়র্সের। সেখানে দ্বিতীয় লেগে জুনিয়র্সের মাঠে অ্যাওয়ে গোল করেন পেলে।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ একসময় হতো শুধুমাত্র ইউরোপ জয়ী আর ল্যাটিন জয়ীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করার জন্য। পরবর্তীতে এটি ক্লাব ফুটবল নামে পরিচিত লাভ করে এবং এই টুর্নামেন্টে আরো কয়েকটি মহাদেশের চ্যাম্পিয়নরা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। এই টুর্নামেন্টের মূল উদ্দেশ্য থাকে বছরের শ্রেষ্ঠ ক্লাব নির্বাচন করা।
সান্তোস এই টুর্নামেন্টটি জিতেছে দু’বার, দু’বারই পেলে থাকার সময়। ১৯৬২ সালে সান্তোসের প্রতিপক্ষ ছিল সেই সময়ের আরেক গ্রেট ইউসেবিওর বেনফিকা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শুরু হওয়ার পর সেটিতে একটানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগকে নিজের সম্পদ বানিয়ে ফেলা রিয়াল মাদ্রিদ ছিল ইউরোপের জায়ান্ট। ফাইনালে সেই জায়ান্ট বধ করে বেনফিকা ইউরোপের সর্বোচ্চ সাফল্য পায়। যদিও এর আগের বছরেই বেনফিকা ইউরোপে চ্যাম্পিয়ন হয়, কিন্তু রিয়ালের মুখোমুখি হতে হয়নি। ১৯৬২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে রিয়াল ছিল দুই কিংবদন্তী স্টেফানো আর পুসকাসসহ। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও সেই ম্যাচ ৫-৩ গোলে জিতে নেয় বেনফিকা। পুসকাসের হ্যাটট্রিকের জবাব দেন ইউসেবিও দুই গোল করে।
প্রথম লেগে ঘরের মাঠে সান্তোস মুখোমুখি হয় বেনফিকার। পেলের দুই গোলে ম্যাচটা জিতলেও (৩-২) দুইটি মূল্যবান অ্যাওয়ে গোল পেয়ে যায় বেনফিকা। নিজের মাঠে ১-০ গোলে জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হতো বেনফিকা। কিন্তু পেলে ৫-২ গোলে জেতা ম্যাচটিতে হ্যাটট্রিক করে সান্তোসকে প্রথম ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জেতান।
১৯৬৩ সালে সান্তোসের প্রতিপক্ষ ছিল বেনফিকাকে হারিয়ে আসা এসি মিলান। এসি মিলানের মাঠে গিয়ে ৪-২ গোলে ম্যাচ হারলেও মূল্যবান ২টি অ্যাওয়ে গোল করেন পেলে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় লেগে সান্তোস ম্যাচ জিতলেও দুই লেগ মিলিয়ে খেলা ড্র হয়। প্লে অফে সান্তোস টুর্নামেন্ট জেতে।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড পেলের। তবে নাম পরিবর্তন করে ক্লাব বিশ্বকাপ হওয়ার পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২০১৬ সালে হ্যাটট্রিক করেছেন।
পেলে কোন পজিশনে খেলতেন তার সবচেয়ে মজার উত্তর দিয়েছিলেন কোচ সালদানা। তিনি ১৯৬৯-১৯৭০ সালে ব্রাজিলের জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। ব্রাজিলের একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন- তার স্কোয়াডের সবচেয়ে সেরা গোলকিপার কে? উত্তরে তিনি পেলের নাম নিয়েছিলেন। তার মতে, পেলে যে কোনো পজিশনেই খেলতে পারতেন।
সর্বকালের সেরারা পেলেকে নিয়ে কি বলেন?
বেকেনবাওয়ারের পেলেকে নিয়ে বলেছিলেন:
“পেলে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। তিনি ২০ বছর সবার চেয়ে এগিয়ে থেকে ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করেছেন। দিয়েগো ম্যারাডোনা, ক্রুয়েফ, প্লাতিনির মতো খেলোয়াড়েরাও তার পেছনে থাকবে। পেলের সাথে তুলনা করার মতোও কেউ নেই।”
ক্রুয়েফের মতে, “পেলে হচ্ছেন একমাত্র খেলোয়াড় যিনি যুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।”
পেলে সম্পর্কে সবচেয়ে মুগ্ধকর কথা বলেছেন হাঙ্গেরিয়ান লিজেন্ড পুসকাস। তিনি বলেন, “সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হচ্ছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো। আমি পেলেকে এই তালিকার বাইরে রাখছি। কারণ তিনি এসবের উর্ধ্বে।”
তথ্য সূত্র: ফিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া ও অন্তর্জালের বিভিন্ন ওয়েবসাইট।