আশাশুনি প্রতিনিধি:
আশাশুনি উপজেলায় সাতদিনের টানা মুষলধারায় বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হয়েছে। জনবসতি, মৎস্য ঘের, সবজি ক্ষেত জলমগ্ন ও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধ হুমকীর মুখে পড়েছে।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নিচু এলাকার বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। চরাচলের রাস্তা তলিয়ে যাওয়াত যাতয়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নাগরিক জীবন এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। উপজেলার বুধহাটা, কুল্যা, দরগাহপুর, কাদাকাটি, আশাশুনি সদর, শ্রীউলা, খাজরা, আনুলিয়া, প্রতাপনগর, বড়দল ও শোভনালী ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মাছের ঘেরগুলোর বাঁধ বহু স্থানে তলিয়ে গেছে, কিছু কিছু এলাকায় ডুবুডুবু করছে। ঘের মালিকরা ঘের রক্ষা করতে বাঁধের উপর দিয়ে নেটজাল টানিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বুধহাটা বাসিন্দা এড. শহিদুল ইসলাম জানান, বেতনা নদী খননের কাজ শেষ না হওয়ায় চাপড়ার কাছ বাঁধ দিয়ে নদী প্রবাহ বন্ধ রাখার কারণে বুধহাটা ইউনিয়নসহ পাশের এলাকার বৃষ্টির পানি নদীতে যেতে পারছেনা। ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবাসিক এলাকা, ফসলের ক্ষেত, মৎস্য ঘের, পুকুর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। এলাকার মৎস্য ঘেরগুলো খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
নৈকাটি গ্রামের জামায়াত নেতা মাও: মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি অনেক জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বুধহাটা বিলের পানি সরানোর জন্য পেট্রোল পাম্পের কাছ থেকে খালের পরিমাটি অপসারন করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। বুধহাটা, নওয়াপড়া, শ্বেতপুর, মহেশ্বরকাটি, বেউলা এলাকার পানি গুড়গুড়ি দিয়ে মরিচ্চাপ নদীতে ফেলানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নাগরিক নেতা প্রভাষক ইয়াহিয়া ইকবাল বলেন, ঘেরের পাশে নেটপাটা অপসারণ, পুরনো ম্যাপ অনুযায়ী খাল-নদী খনন, বিকল স্লুইস গেট সংস্কার, খাল খননে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিত মজুমদার জানান, উপজেলার বেশীর ভাগ মৎস্য ঘের বৃষ্টির পানিতে হুমকীর মধ্যে রয়েছে। অনেক ঘের তলিয়ে গেছে। ঘের মালিকরা ঘেরের বাধের উপর দিয়ে নেটজাল টানিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া রোধে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। হুমকীতে থাকা বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আশাশুনি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন, খাল খনন, কালভার্ট নির্মান কাজ চলছে। এজন্য এলাকার পানি নিস্কাশন বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চল জলমগ্ন হচ্ছে। দুর্যোগ কাটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।