নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডাক্তারি সনদ জালিয়াতি ও প্রতারনার অভিযোগে সোমবার সকাল ১০টায় দ্বিতীয় দফায় তদন্ত হয়েছে। এ সময় ভিকটিম বেবী নাজমিন প্রতারক হিসেবে গত ৩০ মে তারিখে তার চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার গাভা এলাকার সানজিদাকে সনাক্ত করেন।
তদন্ত কালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ এহছেন আরা, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবুল হোসেন ও ডাঃ শরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পাটকেলঘাটা থানার এনায়েতপুর শানতলা গ্রামের কলেজ পড়–য়া বেবী নাজমিন ও তার বোন মারুফা প্রতিপক্ষের হামলায় জখম হয়ে গত ২৮ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সার্জারী কনসালট্যান্ট ডাঃ শরিফুল ইসলাম তাদেরকে ২৯ মে পর্যন্ত চিকিৎসা দেন। একই গ্রামের মাস্টাররোলে কর্মরত রুবেল ওরফে শামীমের মাধ্যমে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারি কাম ওয়ার্ড মাষ্টার আক্তার হোসেনের সঙ্গে বেবী, বোন মারুফা ও তাদের মা সাবিনা খাতুনের পরিচয় ঘটে।৩০ মে সেবিকার দেওয়া এক্সরে স্লিপ নিয়ে অফিসে গেলে আক্তার হোসেন একজন সেবিকাকে ডেকে তাদেরকে নিয়ে ১২৫ নং কক্ষে এক্স-রে করে আসতে বলেন। আক্তার হোসেনের কথামত দু’ বোনের এক্স-রে বাবদ ৭০০ টাকা তাদের সঙ্গে পাঠানো নার্সকে দিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৩০ মে সন্ধ্যায় ভূয়া এক্সরে প্লেট দিয়ে পরদিন ছাড়পত্র দেওয়ার পর এক্স-রে প্লেট, এক্স-রে স্লিপ নিয়ে ছাড়পত্রে কাটাকাটি করে ৩০ মে লিখে তাদেরকে ফেরৎ দেন আক্তার। ওই দিন শামীমের মাধ্যমে বেবী ও মারুফা জানতে পারে যে জামিন পাওয়ানোর সুবিধার্থে তড়িঘড়ি করে দুর্বল ডাক্তারি সনদ দেয়ার জন্য আসামী আব্দুর রহমানের কাছ থেকে৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন আক্তারুজ্জামান। দু’ বোনের মাথায় গভীর ক্ষত হওয়ার কারণে কয়েকটি সেলাই দেওয়ার পরও এমসিতে থেতলানো জখম বলে উল্লেখ করায় তারা অবাক হন। এমসিতে এক্স-রে করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। সাংসদ অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহের কথা মত বিষয়টি নিয়ে নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসুল একজন সাংবাদিককে নিয়ে গত ১৭ জুলাই সিভিল সার্জনের কাছে গেলে তিনি ৩০ মে ওই ওয়ার্ডে কর্মরত দু’ সেবিকাকে না ডেকে একজনকে ও সংশ্লিষ্ট ডাঃ শরিফুল ইসলামকে সামনে না রেখে সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিলকে সামনে রেখে আক্তারের পক্ষ নিয়ে বেবী, মারুফা ও তার মা সাবিনা এক্সরে না করার স্বপক্ষে টিপসহি দিয়েছেন বলে দাবি করে প্রয়োজনে মামলা করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন । বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় ছাপানো হয়। পত্রপত্রিকায় অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় কতদন্ত টিমের প্রধান ডাঃ এহছেন আরার পাওয়া নোটিশ পেয়ে গত ৯ আগষ্ট বুধবার সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সস্মেলন কক্ষে ভিকটিম মারুফা, বেবী নাজমিন, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, ভূমিহীন নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনেন।
একইভাবে সোমবার সকাল ১০ টায় সিভিল সার্জনের সদর হাসপতালের সুপারের অফিস কক্ষে ভিকটিম বেবী নাজমিন এক্সরে করার খরচ বাবদ আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে ৭০০ টাকা নেওয়া সেবিকা সানজিদা খাতুনকে চিহ্নিত করেন। একইভাবে শামীম ওরফে রুবেল তদন্তকারি কর্মকর্তাদের সামনে আক্তারুজ্জামানদের সঙ্গে মারুফা ও বেবী নামজমিনের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে মোবাইলে এক জনের কাছে আক্তারুজ্জামানকে বাচিয়ে দেওয়ার কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেন।
সূত্রটি আরো জানায়, দুর্বল ডাক্তারি সনদ দেওয়ার জন্য ও ডাক্তারি সনদ গ্রিভিয়াস করার জন্য সদর হাসপাতালের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আক্তার হোসেন পরিচিতি লাভ করেছেন। এ ছাড়া সাধারণ ডাক্তারি সনদ গ্রিভিয়াস হিসেবে লিখিয়ে নেওয়া, গ্রিভিয়াস সনদ সিমপিল ইন নেচার হিসেবে লিখিয়ে নেওয়া ব্যাপারে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আক্তারুজ্জামাানের বিরুদ্ধে।
তবে তদন্ত টিমের প্রধান ডাঃ এহছেন আরা জানান, বেবী নাজনিন বুধবার চোখের সমস্যা আছে এমন একজন নার্সই তাদের কাছ থেকে আক্তারুজ্জামানের নির্দেশ মত টাকা নিয়েছে। যা’ সোমবার সে তদন্তকালে সনাক্ত করেছে। যদিও সানজিদা অস্বীকার করেছে বেবীর অভিযোগ। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা চালু না থাকার বিষয়টি অবাক বলেন, এটা চালু থাকলে মুহুর্তের মধ্যেই সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো। তবে কোন নার্স বা ডাক্তারের সামনে বেবী, মারুফা বা মারুফার মা সাবিনার টিপ সহি নেওয়া হয়েছিল তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল টায় মারুফাকে তাদের তদন্ত টিমের সামনে এসে টিপ সহি নেওয়া ও সংশ্লিষ্ট নার্সকে চিহ্নিত করার জন্য বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অফিস সহকারি আক্তারুজ্জামানের এক্স-রে জালিয়াতির ঘটনার নার্স সনাক্ত
পূর্ববর্তী পোস্ট