দেশের খবর: বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো এক রক্তাক্ত আগস্ট এসেছিল ২০০৪ সালে। সেই ২১ আগস্টে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা। আওয়ামী লীগ প্রধান ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুহূর্তের মধ্যে নেতারা ঘিরে ফেলায় প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সেই জনসমাবেশস্থলে ছিটকে পড়তে থাকে খণ্ডবিখণ্ড লাশ। মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন তিন শতাধিক।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ওই নারকীয় হামলা চালানো হয়। মামলার তদন্তেও উঠে এসেছে হাওয়া ভবনে তারেক রহমানসহ বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের অংশগ্রহণে এই নারকীয় হামলার ষড়যন্ত্রের কথা। ষড়যন্ত্রের এই অভিযোগ প্রমাণিত হবে কি না, নাকি শুধুই সেটা জঙ্গি হামলা ছিল তা জানা যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই। বিচার প্রায় শেষের পথে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা সম্পর্কে বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসেই এ মামলায় রায় আসবে। লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। এই একজনের পক্ষে শুনানি শেষ হলেই মামলা রায়ের জন্য প্রস্তুত হবে।’
২১ আগস্ট ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার তথা দেশবাসী অপেক্ষা করছেন এই রায়ের জন্য। অন্যতম আসামি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলেই উভয় পক্ষ আইনগত ব্যাখ্যা দেবে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হবে। আগামী ২৭, ২৮, ২৯ আগস্ট যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে উদ্ভূত হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলারই বিচার একসঙ্গে করছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হবে। এর পরই রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করবেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘রায়ের দিন-তারিখ ঠিক বলা যাবে না। তবে শিগগিরই রায় হবে।’ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, রায় আগামী নির্বাচনের আগেই ঘোষণা হবে এটা নিশ্চিত। বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি হলে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের জবাব দেওয়া হবে। সেটা দু-এক কার্যদিবসে শেষ হবে। আগামী মাসেই রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
১৪ বছর পর ওই হামলার রায় হতে যাচ্ছে। মামলার এজাহার, চার্জশিট ও সাক্ষীদের জাবনবন্দিতে এটা স্পষ্ট যে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই দিন এই নারকীয় ঘটনা ঘটায়। কিন্তু এর পেছনে ছিল বিরাট ষড়যন্ত্র ও সরকারের মদদ। এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের তদন্তে প্রথম জানা যায়, চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অধিকতর তদন্তে প্রকাশ পায় হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি। মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয় হাওয়া ভবনে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ এটি।
গত বছর ১১ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় উদ্ভূত হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করে। এতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান মামলার এজাহার, চার্জশিট এবং আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে চারদলীয় জোট সরকারে ষড়যন্ত্রে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকেও শত্রু মনে করে। এই পরিবারকে ধ্বংস করতে তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দেশে না থাকায় তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। কিন্তু তাঁদেরও হত্যা করার ষড়যন্ত্র তারা করতে থাকে। শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবার নয়, আওয়ামী লীগকেও নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনা করতে থাকে ওই পরাজিতরা। যে কারণে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কারাগারে।
রেজাউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বারবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৪ সালে চূড়ান্ত আক্রমণ চালায়। আর এই আক্রমণের পেছনে ছিল বিরাট পরিকল্পনা; যাতে অংশগ্রহণ ছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের। ওই জোট সরকারের আমলে এই নৃশংস হামলা হয়। হামলাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সব ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট হামলার ঘটনার পর মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর মুফতি আবদুল হান্নান আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। কিন্তু ওই বক্তব্য রেকর্ড করা হয়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সে সময় পুলিশের আইজি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টায় নানা ষড়যন্ত্র করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারীসহ অন্য আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছিল। জজ মিয়া ও শফিকুল ইসলামকে দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করিয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা অপরাধ সংঘটিত করেন। মুফতি আবদুল হান্নানসহ অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করেনি। রেজাউর রহমান বলেন, একপর্যায়ে মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। হান্নান জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছিল কিভাবে তারা প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছিল। হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে মাওলানা তাজউদ্দিনের নাম আদালতে স্বীকার করে সে।
প্রবীণ এই আইনজীবী আরো বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা ওই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। ২০০৪ সালে ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমীন, প্রধানমন্ত্রীর পিএস সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারসহ অন্যরা বাদল নামে পাসপোর্ট তৈরি করে উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে বিমানবন্দর দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। সে সময় বাবরের নির্দেশে প্রশাসনের সহায়তায় কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এ কাজে সহায়তা করেন। এরপর মূল আসামিদের বাঁচানোর জন্য জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। গ্রেনেড হামলা মামলার আলামত নষ্ট করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ আরো বলে, হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান, বাবর, পিন্টু, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, আলী আহসান মুজাহিদসহ তৎকালীন সরকারের নেতারা জঙ্গি মুফতি হান্নানসহ অন্যদর নিয়ে ষড়যন্ত্র করে গ্রেনেড হামলা চালান। এর আগে একাধিকবার পিন্টুর বাসায়ও সভা হয়।
অন্যদিকে আসামিদের পক্ষ থেকে যুক্তিতর্কে দাবি করা হয়, এ ধরনের কোনো ষড়যন্ত্র হাওয়া ভবনে হয়নি। পিন্টুর বাসায়ও কোনো সভা হয়নি। জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের কথা আসামিপক্ষ অস্বীকার করে।
মুফতি হান্নানের জবানিতে : মামলার মূল আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের আদালতে পেশ করা জবানবন্দি থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। হামলা চালাতে সহযোগিতার জন্য মুফতি হান্নান অন্য জঙ্গি নেতাদের নিয়ে উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় কয়েকবার বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও অংশ নেন। হামলার পরিকল্পনার আগে তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের সঙ্গে মুফতি হান্নানের দেখা হয়েছিল হাওয়া ভবনে।
মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালের প্রথম দিকে মোহাম্মদপুরের দারুল আরকান মাদরাসায় (হরকাতের অফিস) হরকাতুল জিহাদের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, হাফেজ জাহাঙ্গীর বদর (জান্দাল), আবু বকর, ইয়াহিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে কী কথা বলা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে মোহাম্মদপুর সাতমসজিদে জঙ্গি নেতারা একত্রে পরামর্শ করে এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে জঙ্গি নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। পিন্টুর বাসায় তাঁর ও বাবরের সঙ্গে বৈঠকও হয়। এই দুই মন্ত্রীই জানান, তাঁরা তাঁর পরিকল্পনায় সাহায্য করবেন। ওই দিনই তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়। এই সূত্রেই হারিছ চৌধুরী ও তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর (মুফতি হান্নান) পরিচয় হয়। হাওয়া ভবনেই সাক্ষাৎ হয়। হরকাতুল জিহাদের কাজকর্মে তারেক রহমান সহযোগিতা করবেন বলে সেই সাক্ষাতে আশ্বাস দেন। এরপর হরকাতুল জিহাদের নেতারা আরো কয়েক স্থানে বৈঠক করেন।
মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে আরো বলেন, ২০০৪ সালের আগস্টে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে (পরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে বলে তাঁরা জানতে পারেন। এরপর তাঁরা একটি বৈঠক করেন এবং তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনিসহ অন্য নেতারা আল মারকাজুলের গাড়িতে করে মারকাজুলের কর্মকর্তা আবদুর রশিদকে নিয়ে হাওয়া ভবনে যান। হাওয়া ভবনে হারিছ চৌধুরী, তখনকার মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকে উপস্থিত পান। কিছুক্ষণ পর তারেক রহমান আসেন। তখন তিনিসহ জঙ্গিরা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলা করার জন্য সহায়তা চান। উপস্থিত ব্যক্তিরা প্রশাসনের মাধ্যমে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেন, ‘তারেক সাহেব বলেন যে, আপনাদের আর এখানে আসার দরকার নেই। বাবর সাহেব ও আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করবেন। তাঁরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।’ এরপর তাঁরা ১৮ আগস্ট আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমণ্ডির সরকারি বাসায় যান। সেখানে পিন্টু, বাবর, মাওলানা তাজউদ্দিন, কমিশনার আরিফ, হানিফ পরিবহনের হানিফ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ২০ আগস্ট জঙ্গি মুফতি মঈন ও আহসান উল্লাহ কাজল পিন্টুর বাসা থেকে ১৫টি গ্রেনেড নিয়ে যাবে। আর হামলা করার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা থাকবে।
গাড়ি নিয়ে হাওয়া ভবনে যাওয়ার যে বক্তব্য মুফতি হান্নান দিয়েছেন তা মিলে যায় এই মামলার সাক্ষী আল মারকাজুল ইসলামের কর্মকর্তা মাওলানা আবদুর রশিদের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও। তিনি জানান, মুফতি হান্নান ও অন্যরা তাঁর পরিচিত ছিলেন। তিনি জানতেন না তাঁরা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত। ইসলামী বুজুর্গ হিসেবেই তাঁদের জানতেন। ২১ আগস্ট হামলার কয়েক দিন আগে মুফতি হান্নান আল মারকাজুলের অফিসে এসে একটি গাড়ি চান এবং গুলশানের হাওয়া ভবনে তাঁদের নিয়ে যেতে বলেন। আবদুর রশিদ তাঁদের নিয়ে হাওয়া ভবনে যান। জঙ্গিরা সবাই হাওয়া ভবনের ভেতরে যান। আবদুর রশিদ নিচেই ছিলেন। কিছুক্ষণ পর সবাই নেমে আসেন। তাঁদের সঙ্গে এ সময় তারেক রহমান ও বাবরকেও দেখা গিয়েছিল।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। তদন্তে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিলেছে। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। সৈয়দ রেজাউর রহমান কালের কণ্ঠকে আরো বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও হাওয়া ভবন ষড়যন্ত্র-পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গিরা ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ারও দাবি করেছি। আদালতের রায়েই প্রমাণিত হবে এটা অপরাধমূলক যড়যন্ত্র ছিল নাকি শুধু জঙ্গি হামলা ছিল।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আগামী মাসে
পূর্ববর্তী পোস্ট