অনলাইন ডেস্ক: সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের জেলা সাতক্ষীরা। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার ফলে দেশের অন্যান্য জেলাগুলো থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকা মনে হলেও জেলা সদরে রয়েছে তিনটি সিনেমা হল। এরমধ্যে দুটি সিনেমা হল লাবণী ও সংগীতা চালু থাকলেও আরেকটি সিনেমা হল রয়েছে বন্ধ!
বন্ধ থাকা হলটির নাম রক্সি। এমনকি এবার ঈদ মৌসুমেও এই হলে নতুন ছবি প্রদর্শিত হয়নি। সরেজমিনে হল সংশ্লিষ্টের সঙ্গে আলাপ করতে গেলেও কেউ কথা বলেননি। তবে সাতক্ষীরার বাকি দুই ঐতিহ্যবাহী হল লাবণী ও সংগীতায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে পৃথকভাবে মুক্তি পেয়েছে ‘মনে রেখো’ এবং ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবি দুটি।
আম ও মাছের প্রাচুর্য্, সীমান্তবর্তী অঞ্চল, শিল্প-সংস্কৃতির শহর সাতক্ষীরার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত লাবণী সিনেমা হল এবং সংগীতা সিনেমা হলে এবার ঈদে দুই ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই দুই সিনেমা হল ঘুরে ঈদের ছবি কেমন চলেছে, তা জানার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক।
লাবণী হলে চলছে মাহির ‘মনে রেখো’:
শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটের ঠিক উল্টোপাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লাবণী সিনেমা হল। বেশ আগে তৈরি এই হলটি সাতক্ষীরার কালের সাক্ষী। লাবণীর আশপাশে বড় বড় সুপারমার্কেট, কসমেটিকস, ফুলের দোকান গড়ে উঠলে আধুনিকায়ের ছিঁটেফোঁটা লাগেনি এখনো। শুধুমাত্র হলে ডিজিটাল মেশিন বসেছে। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বাইরে ও ভেতরের পরিবেশও খুব একটা সুবিধাজনক নয়।
ঈদুল আজহায় এখানে মুক্তি পেয়েছে মাহি ও বনির ‘মনে রেখো’। এই সিনেমা হলে ৩৮ বছর ধরে কাজ করছেন আবদুর রহিম। পেশায় শো অপারেটর হলেও সিনেমা হলের বেশিরভাগ কাজ তিনিই করেন। ম্যানেজারের অনুপস্থিতিতে কথা হয় আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মনে রেখো’ ছবি এখানে ভালো চলেনি। প্রথম সপ্তাহ শেষে দ্বিতীয় সপ্তাহেও চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো শো হাউজফুল যায়নি।
কথা প্রসঙ্গে লাবণী হলের এই কর্মচারী জানান, ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে ছবি এনে চালানো হচ্ছে। প্রদর্শনের প্রায় ১০ দিন হতে যাচ্ছে। এই সময়ে সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা উঠেছে। একেবারে লস প্রজেক্ট! যোগ করে তিনি বলেন, লাবণীতে টিকেটের মূল্য ৪০ টাকা এবং ৫০ টাকা। ঈদের ছবির জন্য বাড়ানো হয়েছিল ১০ টাকা করে।
এমন দর্শক খরার কারণ জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, এবার ঈদে শাকিব খানের একটি ছবি রিলিজ হয়েছে। দর্শকের আগ্রহ সব ওই ছবির দিকে। তাই অন্য ছবি চলতে চায় না। তিনি বলেন, রোজার ঈদে শাকিবের একাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তখন লাবণীতে ‘সুপার হিরো’ চলেছিল। ভালো ব্যবসা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, শাকিব খানের ছবি যেভাবে দর্শক লুফে নেয়, মাহির ছবি ওতোটা নেয়না। আর ‘মনে রেখো’-তে নায়ক আছে তাকে তো কেউ চেনেই না। এজন্য মানুষ ছবিটা দেখতে চাচ্ছে না। এবার ঈদে ছবির ব্যবসায় লাভের মুখ দেখলেন না মহাজন (হল মালিক)।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার শো তে লাবণী সিনেমা হল ঘুরে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ৪৬০টি আসন রয়েছে। তবে উপর-নিচে মিলিয়ে ৪৩ জন দর্শক দেখছেন ‘মনে রেখো’। হল কর্তৃপক্ষের দাবি, আসন এবং ছবির মানের তুলনায় দর্শক খুবই কম। ঈদের প্রথম দিন (২২ জুলাই) থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সেল হয়েছে নয় হাজার টাকা।
সংগীতা সিনেমা হলে শাকিবের ‘ক্যাপ্টেন খান’ :
লাবণী সিনেমা হল (নিউমার্কেট) থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে সংগীতার অবস্থান। ৫০০ আসন বিশিষ্ট এই সিনেমা হলে চলছে শাকিব খান ও বুবলীর ছবি ‘ক্যাপ্টেন খান’। ঈদের দিন থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহেও ‘ক্যাপ্টেন খান’ চলছে। সংগীতা সিনেমা হলের ম্যানেজার মো. হক জানান, প্রথম সপ্তাহে মোটামুটি ভালো চলেছে ‘ক্যাপ্টেন খান’। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যবসা কম।
তিনি বলেন, একলাখ আশি হাজার টাকা দিয়ে ‘ক্যাপ্টেন খান’ চালানো হচ্ছে। ঈদের প্রথম দুদিন হাউজফুল ছিল। পরে হাউজফুল না গেলে দর্শক ছিল ৬০ শতংশ৷ ব্যবসা যা হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই হয়ে গেছে৷
সংগীতা সিনেমা হলের এই কর্মকর্তা বলেন, এই সপ্তাহেই ছবি চলতো। কিন্তু এটা তামিল ছবির রিমেক দর্শক এটা বুঝে গেছে দর্শক। সেজন্য মানুষ হলে না এসে তামিল ছবিটাই ইউটিউব থেকে দেখছে। মৌলিক গল্পের ছবি হলে মানুষ হলে এসে দেখতো। আর যাই হোক এতে আমরা হল কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও রক্ষা পেতাম।
তিনি বলেন, শাকিব খানের ছবির উপর দর্শকদের আলাদাভাবে আকর্ষণ থাকে। যখন দর্শক বোঝে ছবিটা নকল তখন বিরক্ত হয়ে আর দেখে না। আর শাকিব খানের উচিত নকল ছবি পরিহার করে মৌলিক গল্পের ছবি করা। এতে তার ছবির দর্শক কমবে না, বরং আরো বাড়বে।
মো. হক বলেন, এবারের ঈদে ছবির ব্যবসা যে খুব ভালো হয়েছে তা নয়৷ লোকসান হয়নি, আবার লাভের জন্য যে পরিমাণ প্রত্যাশা ছিল সেটা পূরণ হয়নি। সবমিলিয়ে এভারেজ গেছে। খবর পেয়েছি, ১৪ অথবা ২১ সেপ্টেম্বর ‘নাকাব’ মুক্তি পাবে। শাকিব খানের এ ছবিটা চালানো হবে। ভাল বিজনেস করবে বলে আশা রাখছি।
সূত্র: চ্যানেলআই অনলাইন।