দেশের খবর: উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) জন্য উচ্চমূল্যে ১০০ জিপ গাড়ি কেনার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় ৯১ লাখ টাকা ধরে সরকারি যানবাহন অধিদফতরের প্রস্তাবে আপাতত অনুমোদন দেয়া হয়নি।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারি যানবাহন অধিদফতরকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে এসব উচ্চ মূল্যের গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা এবং ইউএনও’দের বর্তমান গাড়ির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গাড়ির প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে। কিন্তু ঢাকায় অবস্থান করে সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এক কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি ব্যবহার করেন না। অথচ উপজেলা পর্যায়ে এত উচ্চ মূল্যের গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা দেখছে না মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি কোন প্রক্রিয়ায় গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিও সুস্পষ্ট নয়। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উচ্চ মূল্যের এসব গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে অহেতুক সমালোচনার মুখে পড়তে পারে সরকার। এসব বিষয় বিবেচনা করে গাড়ি কেনা যৌক্তিকতা সুনির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে অধিদফতরকে। মূলত এ কারণেই গাড়ি কেনা বাবদ প্রায় ৯১ কোটি টাকার প্রস্তাব এই মুহূর্তে অনুমোদন দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি যানবাহন অধিদফতরে একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মূলত সরকারের প্রয়োজনে মোটরযান ক্রয় করতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যানবাহন অধিদফতর ইউএনওদের জন্য ১০০টি জিপ গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। অধিদফতরের গাড়ি কেনা সংক্রান্ত ‘কনডেম কমিটি’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এরপর গাড়ি কেনার জন্য অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন চাওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। সম্প্রতি অর্থ সচিবকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে সরকারি যানবাহন অধিদফতর।
ওই চিঠিতে যানবাহন অধিদফতরের পরিবহন কমিশনার মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের গতিশীলতা আনতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ব্যবহারের জন্য ১০০টি জিপ গাড়ি কেনা দরকার। এজন্য অধিদফতরের অনুকূলে বরাদ্দ থেকে ৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হল।’
সূত্রমতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করে এর পক্ষে একমত হতে পারেনি। যে কারণে প্রাথমিকভাবে কেনার অনুমোদন না দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এর যৌক্তিকতার পাঁচটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে ইউএনওদের ব্যবহৃত গাড়ি অকেজো বলা হয়েছে।
এই অকেজো ঘোষণা সংক্রান্ত বিআরটিএ’র পরিদর্শক দলের প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়া কোন কোন উপজেলায় ইউএনওদের গাড়ি অকেজো হয়েছে সে তালিকাও দিতে বলা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইউএনওদের ব্যবহৃত গাড়িগুলো কত সালে ক্রয় করা হয়েছিল, গাড়ির মডেল কী এবং গাড়িগুলো কত মূল্যে কেনা হয়েছে- এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হয়।
এছাড়া গাড়ি কেনার জন্য কনডেম কমিটির বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের রেজুলেশনের অনুলিপি চাওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিটি গাড়ির মূল্য ৯০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতার বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জন্য সর্বশেষ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২০৮টি গাড়ি কেনা হয়। এর আগে অর্থবছরে অর্থাৎ ২০০৬-০৭ সালে কেনা হয় ৪৭টি জিপ গাড়ি। গত ১১ বছর মোট ২৫৫টি গাড়ি কেনা হয় ইউএনওদের জন্য।
সরকারি যানবাহন অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি বিধান অনুযায়ী একটি গাড়ির আয়ুষ্কাল ন্যূনতম ৮ বছর। ইউএনওদের ব্যবহৃত গাড়িগুলোর আয়ুষ্কাল ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
এছাড়া গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তায় বেশি চলাচল করে ইউএনওদের গাড়ি। যে কারণে গাড়িগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি এসব গাড়ি মেরামতে অনেক ব্যয় হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনিক কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। এসব যৌক্তিকতা থেকে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অর্থ সচিবকে পাঠানো সরকারি যানবাহন অধিদফতরের চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কাজের স্বার্থে প্রতিস্থাপক হিসেবে ইউএনওদের জন্য ১০০টি জিপ গাড়ি কেনা দরকার।
এসব গাড়ি কেনার পক্ষে সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকেও। গাড়ি কেনার জন্য প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে প্রাপ্ত দরপত্র চাওয়া হয়।
তাদের দেয়া দরপত্র অনুযায়ী প্রতিটি জিপ গাড়ির ক্রয় মূল্য হবে ৯০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ওই হিসেবে ১০০টি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কাজের গতিশীলতা আনতে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুতি গাড়িগুলো কেনার প্রয়োজন।