অনলাইন ডেস্ক: প্রায় ৪৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষকের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা টাকা সমস্যার সমাধান হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই পরিশোধ করা হবে ২৮ হাজার শিক্ষকের দেনা-পাওনা। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় ৭৫৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, অবসর সুবিধা বোর্ডে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টে জমা আছে ২৩ হাজার আবেদন। আবেদন নিষ্পত্তি করতে গত আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে বিশেষ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাঁদের অবসর সুবিধার জন্য প্রতি মাসে মূল বেতনের ৪ শতাংশ ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ শতাংশ অর্থ দিয়ে থাকেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকরা যে পরিমাণ টাকা জমা করেন এর কয়েক গুণ বেশি দিতে হয়। অথচ সরকার এত দিন এই দুই ফান্ডে কোনো বরাদ্দ দিচ্ছিল না। ফলে একজন শিক্ষককে টাকা পেতে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বরাদ্দকৃত অর্থছাড়ের জন্য গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব বরাবর চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, অবসর বোর্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৩২ কোটি টাকা ও বোর্ডের এসএনডি হিসাবের অর্থ দিয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত জমাকৃত আবেদন আগামী এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এ জন্য তিনি বরাদ্দকৃত টাকা দ্রুত ছাড়ের জন্য অনুরোধ জানান।
অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁর বিশেষ নির্দেশনা ছাড়া কোনোভাবেই এত বড় অঙ্কের অর্থ একবারে পাওয়া সম্ভব হতো না। আমরা চলতি মাসের মধ্যেই শিক্ষকদের অবসরের টাকা দিতে চাই।’
জানা যায়, তহবিলে টাকা না থাকায় একজন শিক্ষককে অবসরের টাকার জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অবসর বোর্ডের সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন এক হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। বোর্ডের তহবিলে আছে ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এফডিআর বাবদ ১২৮ কোটি টাকা এবং এসটিডি অ্যাকাউন্টে ২১৬ কোটি টাকা। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে বাড়তি এক হাজার ৪০৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। আর পুরনো স্কেলে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ৫৩২ কোটি টাকা। সরকার গঠিত কমিটি গত বছরের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক দ্রুত তাঁদের অবসর সুবিধা পাবেন।
অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্টের সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন এক হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। কিন্তু কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে জমা আছে মাত্র ৪৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এফডিআর বাবদ ২৯১ কোটি টাকা এবং এসটিডি অ্যাকাউন্টে ১৮৫ কোটি টাকা। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ৮৯৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নতুন স্কেলে আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন ২২৫ কোটি টাকা। ফলে কমিটি গত বছরের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই টাকা দিয়ে ১২ হাজার শিক্ষকের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব। তবে কল্যাণ ট্রাস্ট গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষকের টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে ১৬ হাজার শিক্ষক তাঁদের পাওনা টাকা পাবেন।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে রয়েছেন। শিক্ষকদের দুর্দশায় তিনি ব্যথিত হয়েই এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বরাদ্দের মাধ্যমে অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।’