অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত চক্রে রাজধানীর বিভিন্ন নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, প্রেস কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যকে শনাক্ত করে সিআইডি বলছে দেড় থেকে ছয় লাখ টাকায় প্রশ্ন ফাঁস করছে এ চক্রের সদস্যরা। ছাপাখানা থেকে ভর্তি পরীক্ষার হল সবখানেই সক্রিয় জালিয়াতি চক্র। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যরা দুই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস করত।
২০১৭ সালে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলা তদন্তে নেমে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিআইডি। শাহবাগ থানায় ওই মামলাটি হয়েছিল (নম্বর ২৬, ২০ অক্টোবর) তথ্যপ্রযুক্তি ও পাবলিক পরীক্ষা অ্যাক্টে। সিআইডির পরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম মামলাটি করেন।
এরই মধ্যে চক্রের মূল হোতাসহ ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাদের ৩৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সাল থেকে একটি চক্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে।
মূল প্রশ্ন ফাঁস করা:
দুই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের একটি হচ্ছে মূল প্রশ্নটি ফাঁস করা।প্রেস কর্মচারী, প্রশ্ন পরিবহনকারী, পরীক্ষার কেন্দ্র ও বিতরণের সময় তা সরাসরি তাদের হাতে পৌঁছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কেউ কেউ এটি করে থাকে।
ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস:
ভুয়া (ডামি) পরীক্ষার্থী পাঠিয়ে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে হলে বসে বাইরে প্রশ্ন বলে দেয়।বাইরে থাকা বিশেষজ্ঞ টিম দ্রুত প্রশ্ন সমাধান করে এ ডিভাইসের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের সমাধান বলে দেয়। এছাড়া প্রশ্ন বিতরণের সময় মোবাইল ফোনে দ্রুত ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়।
ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে চক্রের অলিভ, ইব্রাহিম, বাধন, মুস্তফা, রাকিবুল হাসান, ইছামি, বনি মারুফ, তনয় প্রশ্ন ফাঁস করত ।
প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত শিক্ষক ও প্রেস কর্মচারীরা:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত চক্রে রাজধানীর বিভিন্ন নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও প্রেস কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পায় সিআইডি। রাজধানীর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষক বাবুল ও ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজের শিক্ষক হোসনে আরা প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠাত।
প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, সাইফুল ও মিনহাজ সরাসরি মূল প্রশ্ন ফাঁস করত। প্রেস কর্মকর্তা খান বাহাদুর ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করত। চক্রের অন্য সদস্যরা সেই প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করত দেড় থেকে ছয় লাখ টাকায়।
প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীও চিহ্নিত:
জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ঢাবিতে চান্স পাওয়া কয়েকজন ছাত্রকেও চিহ্নিত করেছে সিআইডি।
প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে যা করনীয়:
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে আনা, আসন সংখ্যার বিপরীতে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী নির্ধারণ করাসহ পুরো প্রক্রিয়াকে নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।