অনলাইন ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না দিলে আগামীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বিশ্বকে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য গত ১০০ বছরে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে যে হারে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হবে। আর আগামী ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরো তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরুর বরফ গলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যাতে মহাসাগরগুলোর পানির স্তর ৪০ গুণ পর্যন্ত উপরে উঠে আসবে। পানির উচ্চতা এখনকার চেয়ে অন্তত ২০ ফুট বাড়বে। এটি হলে আগামী ৮০ বছরের মধ্যে কার্যত পানির নিচে চলে যাবে অধিকাংশ মহাদেশ!
গত ২৭ নভেম্বর জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্ট ইউএনইপি’র প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘এমিশন্?স গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৮’ শীর্ষক জাতিসংঘের ১১২ পাতার ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে (১৮৯৭ থেকে ১৯৯৭) সমুদ্রের পানির স্তর উঠে এসেছে ৭.১ ইঞ্চি বা ১৮ সেন্টিমিটার। বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রের পানির স্তর সব চেয়ে বেশি বেড়েছে গত ২৪ বছরে। ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির স্তর উঠে এসেছে ৩ ইঞ্চি বা সাড়ে ৭ সেন্টিমিটার, তার মানে, আগের ৭৫ বছরের প্রায় অর্ধেক।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে না দিতে ১৩ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, আমেরিকা ২০৩০ সালের মধ্যে তা পূরণ করতে পারবে না। তবে এ ব্যাপারে ভারতের পদক্ষেপ সন্তোষজনক, চীনও খুব একটা পিছিয়ে নেই।
জাতিসংঘের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা আরো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সমুদ্রের পানির উচ্চতা এক লাখে ১৬ ফুট বা ৫ মিটার পর্যন্ত বাড়বে। আর পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে তাহলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির স্তর ২০ ফুট বা ৬.০৯৬ মিটার পর্যন্ত বাড়বে। যার অর্থ, গত ১০০ বছরে উষ্ণায়নের জন্য যতটা উঠে এসেছে সমুদ্রের পানির স্তর, আর ৮০ বছরের মধ্যে সেই সাগর, মহাসাগর তার ৪০ গুণ ফুলে-ফেঁপে উঠবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের এই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য দায়ী মূলত চীন, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ও ভারতের বড় ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর যানবাহন। এই সব শিল্পকারখানা বাতাসে উদ্বেগজনক হারে বাড়িয়ে দেয় কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ।
সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা