দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর, রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৭ জানুয়ারি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নূরুল হুদা। শুক্রবার কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।’ তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানান।
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, নির্বাচনি সকল মালামাল ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৬ লাখ ৮ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্বপালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
সচিব জানান, এবার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।
এবার ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলো দলই অংশগ্রহণ করছে। ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১ জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৮ জন প্রার্থী।
ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনি এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা- প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার।
সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৩৮৯ টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।
এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার), এছাড়া সারাদেশে জেলা ও মেট্রোপলিটনে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।
সচিব জানান, নির্বাচনে নিয়োজিত ১ হাজার ৩২৮ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন নিয়োজিত থাকবেন।
তিনি জানান, নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
এই নির্বাচনে দেশী ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশী পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক/বিদেশী মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশী সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশী ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো-ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসন।
এরমধ্যে ঢাকা-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৭ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৮জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৩৮টি।
ঢাকা-১৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭০টি।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৩১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ২০৬ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪০টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯২০টি।
রংপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৩টি।
খুলনা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৫ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭২০টি।
সাতক্ষীরা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৮ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৪টি।
নির্বাচন উপলক্ষে আজ মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত বেবি টেক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌযান চলচলের ওপর।
এ ছাড়া ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী, পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এ ছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।