অনলাইন ডেস্ক: অটোরিকশার সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ‘আলোর ফেরিওয়ালা’। নিভৃত পল্লিতে এই অটোরিকশায় লোকজন দেখে এগিয়ে যাচ্ছে কৌতূহলী মানুষ। কাছে গিয়ে তারা জানতে পারছে, এরা আসলে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার ভ্রাম্যমাণ দল। নিয়ম মেনে এই অটোরিকশা থেকেই দেওয়া হচ্ছে নতুন সংযোগ। দাপ্তরিক ৫৬৫ টাকা ফি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ-সংযোগ।
গত বুধ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই দিনে এই কার্যক্রমের আওতায় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ও শ্রীপুর জোনাল অফিসের তত্ত্বাবধানে ৭০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’—এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অনেক দিন ধরে বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। তবে নাগরিকদের ঘরে ঘরে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ দেওয়ার এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলছে। বিদ্যুতের আওতার বাইরে থাকা পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কোনো হয়রানি ছাড়াই নতুন গ্রাহক কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ-সংযোগটি পেয়ে যাচ্ছেন। শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ও শ্রীপুর জোনাল অফিসের কর্মকর্তারা দুটি অটোরিকশা নিয়ে মিটারের সব সরঞ্জামসহ গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। আগ্রহী ব্যক্তিরা আবেদন ফি, ভ্যাট, মিটার জামানত, সদস্য ফিসহ মোট ৫৬৫ টাকা পরিশোধ করলেই তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ–সংযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুতের মিটারের জন্য আগে যেখানে আবেদনের পর দাপ্তরিক জটিলতা শেষ করে সংযোগ পেতে দীর্ঘদিন লাগত, সেখানে মাত্র পাঁচ মিনিটের আনুষ্ঠানিকতা শেষেই মানুষ বিদ্যুৎ-সংযোগ পাচ্ছে।
দাপ্তরিক ৫৬৫ টাকা ফি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের ভ্রাম্যমাণ দল।
বুধবার বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পেয়েছেন শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের মর্জিনা আক্তার। তিনি জানান, এত সহজে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তা জানা ছিল না তাঁর। তিনি ভ্রাম্যমাণ অটোরিকশার সামনে গিয়ে নিজের নামে আবেদন করে সংযোগ পেয়েছেন। একই গ্রামের মোহাম্মদ শরিফ বলেন, তাঁদের এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এত সহজে বিদ্যুৎ পাওয়ার ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি। সাইটালিয়া গ্রামের আমেনা বেগম তাঁর নিজ নামে একটি সংযোগ পেয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য চেষ্টা করছিলাম। এভাবে বাড়িতে এসে তারা মিটার দিয়ে যাচ্ছে—এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আমাদের বাড়ির সংযোগ নেওয়ার খবরে আশপাশের অনেকেই আগ্রহী হয়ে সংযোগ নিচ্ছেন।’
প্রহ্লাদপুর গ্রামের অশীতিপর রমজান আলী বলেন, ‘বিদ্যুৎ এমনভাবে পাওয়া যায়, তা তো জানতাম না। আমরা জানি, কাগজপত্র নিয়ে অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে তারপর বিদ্যুৎ নিতে হয়। এখন আমাদের গ্রামে দেখতেছি বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি লোক আসছে। এটা দেখে আমরা খুব খুশি।’
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর শ্রীপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক অরুণ অধিকারী বলেন, ‘বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার জন্য এখন পল্লী বিদ্যুতের লোকজন মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এই উদ্যোগে আমরা উপজেলার সবাইকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে চাই।’
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর মাওনা জোনাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক কামাল পাশা বলেন, ‘আমরা নিজেদের উদ্যোগেই একেক দিন একেক স্থানে গিয়ে বিদ্যুৎ–সুবিধার বাইরে থাকা পরিবারকে বিদ্যুৎ নিতে উৎসাহিত করছি। তারাও স্বল্প খরচে সংযোগ পেয়ে খুশি। এই প্রক্রিয়াটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলবে।’