বাসন্তী গোধুলি লগ্নে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নানা প্রশংসায় অভিষিক্ত হলেন অতিথিরা। তাদের মুখের ভাষায় অভিষেক হলো সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নতুন নির্বাচিত কমিটির ১৩ কর্মকর্তার। উন্মুক্ত দীঘির শ্রান্ত বাতাসে আ¤্রমুকুলের সুবাসে ফুলেল শুভেচ্ছা আর সম্মাননা ক্রেস্টের ঝিলিকে চমকে উঠেছিল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের মিলনায়তন।
এমনই আয়োজন হয়েছিল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার। বর্ণীল এই আয়োজনের প্রধান অতিথি সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান উপমহাদেশের শীর্ষ শ্রেষ্ঠ শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডাক্তার আফম রুহুল হক বলেন‘ আমি যখন ম্যাট্রিক পরিক্ষা দিয়েছিলাম তখন নৌকায় এসেছিলাম সাতক্ষীরায় গফুর সাহেবের বাড়ির ঘাটে। এখন সে নদী আর নেই। এ নদী খনন করতে হবে। তবেই হবে সাতক্ষীরার উন্নয়ন। তিনি বলেন সাতক্ষীরার সড়ক পথে সুন্দরবন। পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। ভোমরা বন্দরমুখী সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে হবে। আমরা চিংড়িতে বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছি। বিপুল পরিমান সাদা মাছের জন্ম দিচ্ছি, রফতানি করছি। প্রয়োজনের কয়েকগুন বেশি কৃষি ফসল সবজি দিচ্ছি। আমাদের আম যাচ্ছে ইউরোপ। তবু সাতক্ষীরার উন্নয়ন নেই এই আক্ষেপ করে তিনি বলেন কোনো কোনো স্থানে তিনজন আওয়ামী লীগ এমপির মধ্যে একজন মন্ত্রী। আর আমাদের চারজন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির মধ্যে একজনও মন্ত্রী না। আমরা তো এভাবেই বঞ্চিত হচ্ছি দাবি করে তিনি বলেন এ থেকে আমাদের উত্তরন চাই। এ অঞ্চলকে একটি ইকোনমিক জোনে পরিনত করতে হবে। ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এসব সম্ভাবনার দ্বার খোলা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন সবগুলি নদীর মুখ স্লুইস গেটে বন্ধ হয়ে আছে। এগুলি সরাতে হবে নদীকে জীবন্ত করতে হবে। দুর করতে হবে জলাবদ্ধতার অভিশাপ। সবাই মিলে সাতক্ষীরাকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন আমরা আপনাদের সাথে আছি। সাথে থাকবো। সেমিনার করে উন্নয়নের তাৎপর্য তুলে ধরুন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন সাতক্ষীরা কথিত মারামারি কাটাকাটির গর্তে পড়ে আছে। আমাদেরকে এই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই আসবে কাংখিত উন্নয়ন। সাংবাদিকদের জন্য আবাসন আমিও চাই। আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। আমাদের সঠিক পরিচয় সাংবাদিকরাই পারেন বিশ^ দরবারে তুলে ধরতে। তিনি বলেন সাতক্ষীরায় ভাল ভাল সাংবাদিক আছেন। তারা দেশের উচ্চ মিডিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবার ক্লাস এইট পাস মহা মহা সাংবাদিকও উঁকি দেয়। তিনি বলেন উই হ্যাভ টু কন্ট্রোল দেম। না হলে প্রকৃত সাংবাদিকরা বিভ্রান্ত হবেন। আপনারা মুক্তভাবে লিখুন। সমাজকে এগিয়ে নিন। দেশের উন্নয়নে কাজ করুন। ডা. রুহুল হক আরও বলেন আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রেসক্লাবকে আগেও সহযোগিতা করেছি, আবারও করবো। আপনাদের সাথে আছি, থাকবো।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার বলেন মামা আমায় কথা দিয়েছেন। তিনি গেটলক খুলে দেবেন। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে এসএম জগলুল হায়দার এ কথা বলেন। তিনি বলেন আমাদের হাতে আঞ্চলিক বা এলাকা ভিত্তিক উন্নয়ন ক্ষমতা রয়েছে। চাইলেই আমরা এমপিরা অনেক কিছু পারিনা। তবে চার এমপি সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্যের সহযোগিতায়। তিনি বলেন শেখ হাসিনার সরকার সাংবাদিক বান্ধব সরকার। আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীকে ধরতে পারলে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে উন্নয়ন অবশ্যই কাংখিত পর্যায়ে পৌঁছাবে। জগলুল হায়দার আরও বলেন আমি জাতীয় সংসদে প্রেসক্লাবের উন্নয়নে কথা বলেছিলাম। এখন প্রেসক্লাব উন্নয়নের কিছু কাগজপত্র লাল ফিতায় আটকা পড়েছে। আমরা এই লাল ফিতা ছিন্ন করতে চাই। আমরা কেউ ভুল ত্রুটির উর্ধে নই জানিয়ে তিনি বলেন গত ১৫ বছর যাবত সাধারন যাত্রীরা জিম্মি হয়ে আছে বাস মালিকদের কাছে। তিনি সাতক্ষীরা শ্যামনগর রুটের গেটলক খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অধ্যক্ষ আবু আহমেদকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন সাংবাদিকরা এখন মুক্ত মনে লিখতে পারছেন। তবে কিছু কিছু সাংবাদিক হুট করে না জেনে না শুনে কিছু একটা লিখে দিলেই সকালে ঘুম থেকে দেখবেন আপনার মান সম্মান সব শেষ। এমন হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিক থাকলেও সাতক্ষীরার বেশিরভাগ সাংবাদিক বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম বলেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের অনেক ঐতিহ্য, অনেক পরিচিতি। সুসময়েই নয় শুধু মানুষের দুঃসময়ে দুর্যোগে দুর্বিপাকে তারা মন প্রাণ দিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। তারা তাদের লেখনী দিয়ে গনমানুষের কল্যাণ করছেন। তারা লিখলে প্রশাসনের টনক নড়ে। রাজনীতিবিদ সমাজ কর্মী সবাই নড়েচড়ে বসে। সবাই সচেতন হয়। এ সময় প্রকৃত চাহিদা বেরিয়ে আসে । আমরা সবাই উপকৃত হই। আপনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমরা সব সময় আপনাদের সাথে আছি।
বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন সংবাদ মাধ্যমগুলি অসংখ্য ধুলি কণা তুলে ধরতে পারে। এজন্য তারাই সবচেয়ে বড় দর্পনের কাজ করে। এই দর্পনকে স্বচ্ছ রাখা দরকার। আর এ কারণেই সমাজের নিন্দুকদের কাছে তারা অনেক সময় চক্ষুশূল হয়ে পড়েন। তবু প্রকৃত সাংবাদিকরা অপসাংবাদিকতার প্রশ্রয় দেন না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে সমাজের প্রকৃত চেহারা ফুটে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন একপেশে খবর, খবর নয়। স্বাধীন গন মাধ্যম যদি যথাযথ ভূমিকা রাখতে না পারে তাহলে সেই সমাজ পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। সঠিক সংবাদে সমাজের কল্যাণ হয়। আর অনভিপ্রেত সংবাদ সমাজের ক্ষতি করে। সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের সাথে আমার প্রফেশনাল ঘনিষ্ঠতা খুব বেশি মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক বলেন আপনাদের দক্ষতার প্রসার ঘটাতে হবে। উৎকর্ষ সাধনের জন্য আরও প্রয়াস চালাতে হবে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের মশাল প্রজ্জ্বলিত। এই মশালকে এগিয়ে নিতে হবে। গভীর প্রফেশনাল সম্পর্ক নির্মান করতে হবে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জেলা প্রশাসক হিসাবে আমার যতো করনীয় তা করবো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিষেক অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা ‘ফোর্থ স্টেট’। এখানে আছে গণতন্ত্রের অবাধ চর্চা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। যারা এই পেশায় রয়েছেন তাদের সাথে পুলিশের মিল রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন প্রেস ও পুলিশ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দেশ ও জনগনের উন্নয়নে তারা অনবরত কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন সাংবাদিকদের আরও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। স্বাধীনতার মাস এই মার্চে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে আমাদের পথ চলতে হবে। তিনি নব নির্বাচিত কমিটির সাফল্য কামনা করেন।
অভিষেক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন আমরা উন্নয়নের পক্ষে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। আমরা জনগনের কল্যান ও উন্নয়নের পক্ষে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সাথে মিলিত হয়ে উন্নয়ন কাজ করতে চাই। তিনি বলেন প্রেসক্লাব উন্নয়ন বঞ্চনায় রয়েছে। এই বঞ্চনা থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। আমরা চাই সাংবাদিক প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন। এই বন্ধন হবে দৃঢ় , উল্লেখ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর সঞ্চালনায় স্বচ্ছ বৈকালিক এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী। অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ইতিহাস ঐতিহ্য অতীত ও বর্তমান কর্মকান্ড ছাড়াও ভবিষ্যত কর্মযজ্ঞের কথা তুলে ধরে বক্তৃতা করেন সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার ও বিশিষ্ট সমাজসেবক ডা. আবুল কালাম বাবলা প্রমূখ সুধিজন। অতিথিরা নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এর আগে অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করেন প্রেসক্লাব সদস্যগন।
সন্ধ্যায় দীপালোক একাডেমির পরিচালক ৭১ টিভির বরুন ব্যানার্জির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ডা. আফম রুহুল হক এমপি — উন্নয়নে কল্যানে সাথে আছি থাকবো
পূর্ববর্তী পোস্ট