ভিন্ন স্বাদের সংবাদ: ‘এক রাতে আমি সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে রাউন্ডে এসে আমার মাথার নিচে কোনো বালিশ না দেখতে পেয়ে নিজের ঘুমানোর বালিশ আমার অজান্তে মাথার নিচে দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। আজ আমার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরকারিভাবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক স্মৃতি।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনায় এভাবেই জাতির জনকের স্মৃতি রোমন্থন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণার সময় কাঁদছিলেন তিনি। এ সময় তার বক্তব্য শুনে অন্যরাও কেঁদেছেন। স্মৃতিচারণার একপর্যায়ে পুরো মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মাহবুব তালুকদার। কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। অস্পষ্ট স্বরে কেবল ধন্যবাদ দিয়ে নিজের আসনের দিকে চলে যান। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনই তিনি আমায় ডেকে বলেন, ‘‘মাহবুব, তুমি আমার সঙ্গে থাকবা।’’ আমাকে রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদবি বড় কথা নয়, দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার পর স্বভাবতই আমি খুব খুশি হই।’
‘আমার দায়িত্ব পড়ে, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নেওয়ার। সিদ্ধান্ত হয় দুপুরে খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশ্রামের সময়টুকুতে আমি তার রুমে ঢুকে যাব। তিনি আমাকে বলেন, যদি কোনো অজুহাতে ডিকটেশন দেওয়ার জন্য তিনি সময় না দিতে পারেন, তাহলে আমি যেন জোর করে ডিকটেশন নিই।’ তিনি বলেন, ‘সেইমতে আমি পরপর তিন দিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নিই। তার ডিকটেশন রেকর্ডও করি। চতুর্থ দিন এসে বঙ্গবন্ধু বেঁকে বসেন। বলেন, ‘‘তোমার জন্য তো আমি বিশ্রামটুকুও নিতে পারছি না।’’ আমি তাকে বলি, ‘‘আইয়ুবের শাসন, আপনার ছয় দফা, পাকিস্তানের জেলে বন্দীর দিনগুলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে তো আপনাকে ডিকটেশন দিতে হবে। আপনার বিশ্রামের সময় আপনাকে বিরক্ত করা আমারও ভালো লাগে না। তাই আপনি আমাকে অন্য একটা সময় বের করে দিন।’’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘আমি সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনছি, পরিবারের বিয়েশাদি শেষ করে দিয়েছি। সামনেই ডিকটেশন নেওয়ার সময় বের করে দেব। কোনো কিছুই আটকে থাকবে না’’।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান যেদিন মারা যান। সেদিন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সারা দিন ছিলাম। চল্লিশার দিনে ঠিক হয়, বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। গাজী জাহাজে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়।’
‘আমার জাহাজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকায় কাপড়চোপড় সঙ্গে নেওয়ার কথা মনে হয়নি। রাতে জাহাজ ছাড়লে দেখি, আমার শোয়ার কোনো জায়গা নাই। একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পড়ি। পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন।