দেশের খবর: নদীপ্রধান বাংলাদেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে ১২ হাজার শিশু মারা যায়। তাদের ৪০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে; যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়েই ঝুঁকি বেশি। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ৩০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের অর্থায়নে এ তিন প্রতিষ্ঠান ২০১২ সাল থেকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গবেষণা করছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত চলবে এ গবেষণা। গবেষণা কাজে সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরামর্শক সিনার্গোস।
সংবাদ সম্মেলনে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের পরিচালক কেলি লারসন জানান, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সাতটি উপজেলায় ১ থেকে ৪ বছর বয়সী প্রায় ৭১ হাজার শিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। তিনি আরও জানান, প্রতি বছর পানিতে ডুবে যে ১২ হাজার শিশু মারা যায়, তার মধ্যে ৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি।
কেলি লারসন বলেন, এই শিশুদের ৭৫ শতাংশ বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে পানিতে ডুবে মারা যায়। এর বড় কারণ হচ্ছে, পরিবারের অসচেতনতা। মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। গ্রামীণ নারীরা এ সময় সাধারণত গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত থাকে। তাদের শিশুরা এই সময়ের মধ্যেই চলে যায় বাড়ির পাশে পুকুর বা ডোবার ধারে। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস, ডিজঅ্যাবিলিটি, ভায়োলেন্স অ্যান্ড ইনজুরি প্রিভেশন বিভাগের কর্মকর্তা ডেভিড মেডিংস জানান, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর কমপক্ষে তিন লাখ ২২ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, যার ৯০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিআইপিআরবি) পরিচালক আমিনুর রহমান জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আইসিডিডিআর’বির যৌথ উদ্যোগে সাতটি উপজেলার পাশাপাশি বরিশালের তিনটি উপজেলায় তারা পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে কাজ করছেন। পরিবারকে সতর্ক করতে তারা সচেতনমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সেখানে স্থাপন করেছেন ‘আঁচল ডে কেয়ার সেন্টার’। গ্রামের গৃহিণী বা কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশুদের এই ডে কেয়ার সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেখভালের জন্য রাখতে পারবে। ১০ উপজেলায় তাদের ডে কেয়ারের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। পাশাপাশি শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের কর্মসূচিও চালু রয়েছে। তিনি আরও জানান, ডে কেয়ার সেন্টারগুলোয় শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশের লক্ষ্যে নানা শিক্ষামূলক কর্মসূচিও রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবদুল গফুর এম বাচানি।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের তত্ত্বাবধানে পানিতে শিশু ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ভিয়েতনামে কাজ করছে দেশটির শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশটির শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের সহ-পরিচালক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ভু থি কিম হুয়াও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।