ভিন্ন স্বাদের খবর: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৭ সালের নভেম্বরে এর মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়, যদিও প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আসবাবপত্র কেনা ও ফ্ল্যাটে তোলায় হরিলুটের চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসে। বিশিষ্টজনেরা বিষয়টিকে ইতিহাসের সেরা হরিলুট বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিষয়টি তদন্ত করার দাবি জানিয়ে তারা বলছেন, সরকারি অর্থ লোপাট হচ্ছে, এটা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এমন অবিশ্বাস্য কাহিনি এটা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না।
আসবাবপত্রের দাম ও ফ্যাটে ওঠানোর খরচে বিশ্ব রেকর্ড
ফ্ল্যাটের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে আর ফ্ল্যাটে তা তুলতে কেমন খরচ পড়েছে তা একবার চোখ বুলিয়ে দেখা যাক। প্রতিটি বালিশ কেনায় খরচ পড়েছে ৫৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ হয়েছে ৭৬০ টাকা। প্রতিটি বিছানা কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৯৮৬ টাকা। আর ওঠানোর ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। চাদর ও বালিশ কেনা হয়েছে ৩৩০টি করে। খাট প্রতি কেনায় খরচ হয়েছে ৪৩৩৫৭ টাকা। আর ওঠানোর ব্যয় ১০৭৭৩ টাকা। খাট কেনা হয়েছে ১১০টি। একটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনার খরচ পড়েছে ৭৭৪৭ টাকা। আর ওই চুলা ওঠাতে ব্যয় হয়েছে ৬৬৫০ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক কেটলি কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৩১৩ টাকা। আর ওঠানোর খরচ ২৯৪৫ টাকা। রুম পরিষ্কারের একটি মেশিন কিনতে সংশ্লিষ্টরা খরচ দেখিয়েছে ১২০১৮ টাকা। আর ওঠাতে খরচ দেখিয়েছে ৬৬৫০ টাকা। প্রতিটি ইলেক্ট্রিক আয়রন কিনতে খরচ পড়েছে ৪১৫৪ টাকা। আর ওঠানোর খরচ ২৯৪৫ টাকা। টেলিভিশন প্রতিটির দাম ৮৬৯৬০ টাকা। আর ওঠানোর খরচ ৭৬৩৮ টাকা। টেলিভিশন কেনা হয়েছে ১১০টি। সেগুলো রাখার জন্য আবার কেবিনেট করা হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭৮ টাকা করে। ফ্রিজের দাম দেখানো হয়েছে প্রতিটি ৯৪২৫০ টাকা। আর ওঠাতে খরচ পড়েছে ১২৫২১ টাকা। ওয়ারড্রোব প্রতিটি কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯৮৫৮ টাকা। ওঠাতে খরচ পড়েছে ১৭৪৯৯ টাকা। মাইক্রোয়েভ প্রতিটি কেনায় ব্যয় ৩৮২৭৪ টাকা। খরচ হয়েছে ৬৮৪০ টাকা। প্রতিটি সোফা কেনা হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০৯ টাকায়, ভবনে ওঠাতে খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৪ টাকা করে। ১৪ হাজার ৫৬১ টাকা করে কেনা সেন্টার টেবিলের প্রত্যেকটি ভবনে তুলতে লেগেছে ২ হাজার ৪৮৯ টাকা। ছয়টি চেয়ারসহ ডাইনিং টেবিলের প্রতিটি সেট কেনা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৬৭৪ টাকায়। ভবনে তুলতে লেগেছে ২১ হাজার ৩৭৫ টাকা করে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিধিবিধান মেনেই কাজ করে থাকি। এখানে উন্মুক্ত দরপত্র দিয়ে মালামাল কেনাসহ অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই করা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো: শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই এসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই খোঁজখবর না নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, এ ধরনের একটি বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে আসার পর দরদাম ও অন্যান্য বিষয়াদি দেখার জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। এরপর তারা কী করেছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের থাকার জন্য নির্মিত ভবনে আসবাবপত্র কেনা আর তা ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ দেখে তাজ্জব সবাই। এমন বেহিসাবি কারবারে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বইছে ঝড়। কেউ কেউ কৌতুক করে বলছেন, বাহুবলি সিনেমার নায়কও বাংলাদেশে আসছেন, বালিশ তোলার কাজ করতে। অনেকে আবার, বিসিএসের পড়াশুনা বাদ দিয়ে বালিশ তোলার কাজ খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন।
‘সাপ্তাহিক’ সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন , বালিশ কেনা-উঠানোর খরচ দেখে যারা অবাক হচ্ছি, তারা হয়ত কল্পনাও করতে পারছি না, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আসলে কী ঘটছে! রাশিয়া থেকে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়ে চলছে এই প্রকল্প। ঋণের টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে প্রযুক্তি লোকবল সবই বিদেশি। কোন শর্তে ঋণ নেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অজানা। সম্পূর্ণ অস্পষ্ট নিরাপত্তার দিকটিও। এত ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনিরাপদ প্রকল্প বিষয়ে দেশের মানুষ হিসেবে আমরাও বেশ নির্বিকার