দেবহাটা ব্যুরো: তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেবহাটা টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া উপজেলার দাদপুর গ্রামের কাজল সরদারের পুত্র বকুল সরদার নামের এক ছাত্রকে বেদম মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উক্ত ছাত্র শিক্ষক ও মেম্বর এবং চেয়ারম্যানের হাতে-পায়ে ধরেও ক্ষমা পায়নি। মারপিটের শিকার আহত ছাত্র বকুলকে সখিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এবিষয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বকুল জানায়, সোমবার স্কুল চলাকালিন সময় তার সহপাঠি ২জন এবং নবম শ্রেণির ২ জন ছাত্রীকে দীর্ঘ সময় বাহিরে দাড় করিয়ে রাখে শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীদের ছেড়ে দিলেও ক্লাসে ঢুকতে বাঁধাদেয় আমিরুল স্যার। তখন আমার সাথে পড়–য়া আমার দুই বন্ধুদের কাছে তাদের ক্লাসে না ঢুকতে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমার শিক্ষক আমিরুল স্যার তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। আমার অপরাধ জানতে চাইলে আরও চড়াও হয়ে আমাকে গালিগালাজ করে এবং আমার জামার কলার ধরে টেনে হেঁচড়ে মারতে মারতে বাহিরে নিয়ে আসে আমিরুল স্যার। আমার আত্মচিৎকারে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী প্রধান শিক্ষক সামছুর রহমান এসে কোন কিছু না শুনে তিনিও আমাকে মারপিট শুরু করেন। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সামছুর স্যারের পায়ে ধরলেও তিনি আমাকে ক্ষমা না করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলুকে খবর দেন। আমি দরজা ধাক্কা ধাক্কির করতে থাকি এমন সময় দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ৬নং ইউপি সদস্য বাবলু এসে দরজা খুলে আবারও আমাকে বেদম মারপিট শুরু করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এসময় আমার পিতা- মাতা খবর পেয়ে আমাকে আহত অবস্থায় সখিপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। এবিষয় টাউনশ্রীপুর শরচ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিরুল জানান, দরজায় লাথি মারার কারণে আমি মাত্র একটি বাড়ি মেরেছি আর ইউপি সদস্য বাবলু এসে তাকে মারপিট করেছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সামছুর রহমান জানান, আমরা তো মারিনি, মারধর করেছে ইউপি সদস্য বাবলু। আপনারা নিউজটি করবেন না কাল সকালে আসেন সাক্ষাতে কথা হবে।
বিষয়টি ইউপি সদস্য বাবলুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্র বেয়াদবী করেছে বলে আমাকে জানালে আমি তাকে মারপিট করি। তবে একজন ইউপি সদস্য হয়ে বিদ্যালয়ে এসে আইন হাতে তুলে নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি তার পাশে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে ফোন ধরিয়ে সাংবাদিকদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন, তুমি আবার কোন সাংবাদিক? তোমাদের মত দ’ুটাকার সাংবাদিক কি করতে পারো করো। আমার ভালোমত জানা আছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র বাদরামি করেছে তার শাস্তি মেম্বর দিয়েছে। প্রয়োজন হলে আমার বক্তব্য নিতে হবে। অপরাধীর শাস্তি দিয়েছি। এখানে কারো কথা শুনতে বাধ্য নই।
কিন্তু বিদ্যালয় চলাকালে স্কুলে ঢুকে শিশু নির্যাতনের মত ঘটনার জবাবে তিনি বলেন, কিসের শিশু? কোন শিশুকে মারা হয়নি। তাছাড়া কিশোর অপরাধে আইন হাতে তুলে দেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন আগামিকাল তাকে স্কুল থেকে বহিস্কার করে দিব। সাংবাদিক হয়ে কি তোমরা যা ইচ্ছা করবে। আমরা যা ভালো মনে করেছি তার জবাব কাউকে দিতে বাধ্য নয়। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরীক্ষার দায়িত্ব থাকায় বিষয়টি আমি জানিনা। বিদ্যালয় এসে একজন ইউপি সদস্য এধরনের মারপিট করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে আপনারা নিউজটি করবেন না আপনারা কাল স্কুলে আসবেন ম্যানেজ করা হবেÑ বলে ফোন রেখে দেন তিনি। এবিষয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষকরা মারতে পারেনা সেখানে আবার বহিরাগতরা কীভাবে মারে? আমরা এর কঠোর ব্যবস্থা নিব। এবিষয় আহত’র পিতা কাজল সরদার জানান, আমার সন্তানের অপরাধ থাকলে আমাকে বলতে পারত। আমি আগামিকাল (আজ) জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
পূর্ববর্তী পোস্ট