অনলাইন ডেস্ক:
বগুড়ায় ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায়’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১৩ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। রোববার বিকেল ৫টার দিকে শহরের উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাগারের সামনে এ হামলা চালানো হয়। ভিপি নুর ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা বগুড়ায় এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে নুরসহ ৪ জন বগুড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসকরা তাদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও নিরাপত্তার কারণে তারা হাসপাতাল ছেড়ে ঢাকায় রওনা দেন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, নুরুল হক নুর কোটা আন্দোলনে জড়িত শিবির কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল বলে সাধারণ ছাত্ররা তাদের বাধা দিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বগুড়া জেলা কমিটির আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে রোববার বিকেলে শহরের উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাহার মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ডাকসুর ভিপি নুরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অতিথি করা হয়। ওই মিলনায়তনের পাশে শহীদ টিটু মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি দুটি স্থানে দুটি সংগঠনের কর্মসূচির কারণে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের কর্মসূচি স্থগিতের জন্য বলা হয়।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গোয়ান্দা সংস্থার বলার পর আমরা প্রোগ্রাম চাচ্ছিলাম না। ভিপি নুরসহ ঢাকা থেকে যারা আসছেন তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা বসেছিলাম। কিন্তু তারা আসার পর পরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।
ভিপি নুরের সঙ্গে আসা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান বলেন, আমরা ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে ১৩ জন এসেছি। আমরা বিকেল ৫টার একটু পরে অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হই। এর পরপরই ছাত্রলীগের ৫০/৬০ জন নেতা-কর্মী আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় তারা মিলনায়তনের ভেতরেও ভাংচুর চালায়। পরে আমাদের সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি মেডিকেল অফিসার ডা. রোকাইয়া আক্তার অ্যানি বলেন, ভিপি নুর, রাতুল, আপন ও ফারুক নামে ৪ জন চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে নুরের মুখ, কপাল ও পায়ে; আপনের ঘাড়ে; রাতুলের পায়ে এবং ফারুকের শরীরের একাধিক স্থানে জখম ছিল। আমরা ওই ৪জনকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ভর্তি না হয়েই চলে যান।
যোগাযোগ করা হলে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান জানান, নিরাপত্তার অভাবে তারা হাসপাতাল ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
সন্ধ্যা ৭টায় ভিপি নুরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রুবেল নামে তার এক বন্ধু বলেন, আমরা এখন ঢাকার পথে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ জানান, তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলে যাওয়ার জন্য উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাহারের সামনে দিয়ে আসার সময় হট্টগোল শুনতে পেয়েছেন। পরে দেখেছেন কারা যেন নুরকে মেরেছে। তখন ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
তবে তার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস বলেন, ভিপি নুর কোট আন্দোলনকারী শিবির কর্মীদের নিয়ে সভার আয়োজন করেছিল। সাধারণ ছাত্ররা তার কাছে গিয়ে জানতে চায় তিনি কেন শিবিরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করতে এসেছেন। তখন সে উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করে, আমরা কাদের নিয়ে কি করবো সেটি আমাদের বিষয়। তার একথায় সাধারণ ছাত্ররা উত্তেজিত হয় তাদের প্রতিরোধ করে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়নি।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান বলেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের স্থানীয় নেতা রাকিবুল ইসলাম রাকিব আমাদের কাছে তাদের প্রোগ্রামের অনুমতি চেয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল অনুমতি দেয় ডিএসবি। কিন্তু যতদূর জানা গেছে ডিএসবিও তাদের অনুমতি দেয়নি। তার পরেও তারা এখানে প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল। তবে আমরা আসার আগেই শুনি ভিপি নুরসহ কয়েকজনের ওপর হামলা হয়েছে এবং তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কারা হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি।