দেশের খবর: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১৬ সালের শেষের দিকে। ওই ঘোষণার পর আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও সংস্থাটির কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীই দুদকে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেননি। এদিকে, ২০০৪ সালের নভেম্বরে দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটির মাত্র দু’জন কর্মকর্তা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। তাও, সংস্থার সিদ্ধান্তে নয়, স্বেচ্ছায় তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন।
এতদিনেও দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেন সম্পদের হিসাব জমা দেননি, সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তবে তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু সেটি দুদকের সিদ্ধান্তে কিনা, জানি না।’
ঘুষ কেলেঙ্কারি ও তথ্য ফাঁসের ঘটনায় বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের প্রসঙ্গ টেনে দুদকের সাবেক কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘কমিশনের কাজই হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ করা। অবৈধ সম্পদ যারা অর্জন করছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয় কমিশন। এমন কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নিজেদের স্বচ্ছতার জন্যই সম্পদ বিবরণী দাখিলের নিয়ম চালু জরুরি।’
এ প্রসঙ্গে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী অবশ্যই দুদকে থাকা উচিত। তবে, শুধু সম্পদ বিবরণী থাকলেই যে কারও দুর্নীতি ধরা পড়বে বিষয়টা সে রকম না। নজরদারির প্রয়োজন আছে। কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী কেমন আচরণ করেন, কোথায় যাচ্ছেন, তাদের ওঠবোস কাদের সঙ্গে, তারও খোঁজ রাখা দরকার।’
দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। সম্পদ বিবরণী হাতে পাওয়ার পর অনুসন্ধান ও তদন্ত চলে। নেওয়া হয় আইনগত ব্যবস্থা। নোটিশ পাওয়ার পরও সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬ (২) ধারায় মামলা হয়। দুদক বাদী হয়ে দায়ের করা এই মামলায় সাজা ৩ বছরের জেল।
সম্পদ বিবরণী জমা নেওয়ার ঘোষণা:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দুদকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানে দুদকের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দুদকে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আগামী বছর (২০১৭ সাল) থেকেই সম্পদের হিসাব দিতে হবে।’ ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, দুদকের তৎকালীন কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) ড. শামসুল আরেফিন।
দুদকের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দুর্নীতি সন্ধানে কাজ করছি। কিন্তু অনেক স্থানে গিয়ে শুনতে হয় আমাদের কর্মকর্তারও নাকি দুর্নীতি করেন। তাই ভবিষ্যতে যেন কোথাও গিয়ে আর এই কথা শুনতে না হয়, সেজন্য ২০১৭ সাল থেকে সব কর্মকর্তার সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সুশাসন বা দুর্নীতি সংক্রান্ত সূচকে দেশ পিছিয়ে আছে।’
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ২ জনের সম্পদের হিসাব দাখিল
২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর এর আগে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর নাম পরিবর্তন হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হয়। দুদকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে একজন চেয়ারম্যান ও একজন সচিব দুদকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসান মশহুদ চৌধুরী ও দুদকের তৎকালীন সচিব দেলোয়ার হোসেন তাদের সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেছিলেন। গণমাধ্যমের সামনে সেই তথ্য প্রকাশও করেছিলেন তারা। এরপর থেকে দুদকের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি।