বিদেশের খবর: বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমাতে ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি যুবরাজকে চাপ দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু ট্রাম্পের সে আশায় পানি ঢেলে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন। চলতি সপ্তাহেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, উৎপাদন বাড়াবে না ওপেক।
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই এককভাবে ওই ঘোষণা দেন তিনি। এ ঘোষণাকে ট্রাম্পের জন্য পুতিনের চপেটাঘাত হিসেবে দেখছেন অনেকেই। খবর রয়টার্সের।
পুতিনের ওই ঘোষণা প্রথমত ইরান ও ভেনিজুয়েলার মতো ওপেকের কিছু সদস্য দেশকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। কেননা তখনও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসেনি ওপেক।
সদস্য না হয়েও ওপেকের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে পুতিনের এমন ঘোষণা শঙ্কিত করে তোলে দেশগুলোকে। তাদের অভিযোগ ছিল, এক সময় তেলের বাজারে যে দেশটিকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হতো তারাই এখন ঠিক করে দিচ্ছে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত কি হবে।
কিন্তু শিগগিরই সেই বাস্তবতা বদলে যায়। সদস্য দেশগুলো এখন মনে করছে, তেলের দাম নির্ধারণে ভারসাম্য রক্ষার মতো বিষয়ে ওপেককে সহায়তা দিতে পারে মস্কো।
কেননা ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব এবং দেশটির নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ভেনিজুয়েলা ও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের বাজার স্বাভাবিক রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবি, উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর মাধ্যমে যেন তেলের দাম আরও কমানো হয়।
আগামী বছর দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামবেন ট্রাম্প। কম দামে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কিনতে সক্ষম হলে বিষয়টি নিজের কৃতিত্ব হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করতে চান তিনি।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কেমন হবে তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও অন্যতম নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প যতই চেষ্টা করুন না কেন দাবার ঘুঁটি ফেলে যেন বৈশ্বিক তেলের বাজারের মূল ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন পুতিন।
উৎপাদন কমাতে পুতিনের ঘোষণায় খুশি ছিল না মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইরান। দেশটির তেলমন্ত্রী বিজান জানগানেহ ওই ঘোষণার সমালোচনা করে বলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওপেকের মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে।
তেল উৎপাদন ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতায়ও আক্ষেপও প্রকাশ করেন তিনি। পরে অবশ্য ওই সমালোচনা থেকে সরে এসে তিনি বলেন, ওপেক প্রতিনিধিদের সম্মেলন তেহরানের জন্যও ইতিবাচক ছিল। এ সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা অর্জিত হয়েছে।
ওপেকের সদস্য দেশগুলোর ওই সম্মেলনে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা ছিল মূলত পুতিনের ঘোষণারই প্রতিধ্বনি। বিশ্ববাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তেলের সরবরাহ কামানোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ওপেক।
১ জুলাই ভিয়েনায় ওপেকভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সংস্থাটির মহাসচিব।