খেলার খবর: ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল ২৪২ রান। একশ করার আগেই তারা ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচে উত্তেজনা ফেরায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু জস বাটলার ও বেন স্টোকসের ব্যাটে আবার ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। এরপর শেষ দিকে জমে ওঠে ম্যাচ লকি ফার্গুসন ও জিমি নিশামের জোড়া আঘাতে। নাটকীয় শেষ ওভারে শ্বাসরুদ্ধকর পারফরম্যান্সে স্টোকস ম্যাচে ফেরান সমতা। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। বিস্ময় আর রোমাঞ্চে ভরা এক ফাইনাল উপহার দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড।
১৯৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়া আর ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের কাছে ফাইনালের ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিলো ইংল্যান্ড। মাইক ব্রিয়ারলি, মাইক গ্যাটিং ও গ্রাহাম গুচদের আক্ষেপ ঘুচালেন এউইন মরগান। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেওয়ার পর থেকে যে উত্থান, তারই পুরস্কার তারা পেলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে। দলকে শীর্ষ র্যাংকিংয়ে নেওয়া অধিনায়কের হাতেই উঠলো বিশ্বকাপ ট্রফি।
ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারলেও স্কোরবোর্ডে দাপট ছিল তাদের শুরু থেকে। কিন্তু হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে তারা। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার খাদের কিনারায় রেখেছিল তাদের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ২৭ বছর পর নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল, যেখানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অজিদের উড়িয়ে দিয়ে জায়গা করে নেয় চতুর্থ ফাইনালে। লর্ডস প্রস্তুত ছিল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে বরণ করে নিতে। শেষ পর্যন্ত ঘরের ছেলেরাই ট্রফি হাতে উদযাপন করলো নিজেদের ব্যালকনিতে।
লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকসের বোলিং তোপে ইংল্যান্ডকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলসের ফিফটির সঙ্গে টম ল্যাথামের লড়াকু ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৪১ রান করে কিউইরা। এরপর টপ অর্ডার সুবিধা করতে না পারলেও বেন স্টোকস ও জস বাটলারের দারুণ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড।
লক্ষ্যে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে দলের দারুণ শুরুর ভিত গড়ে দেওয়া জেসন রয় বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাকে ১৭ রানে ফেরান ম্যাট হেনরি। কিউই পেসারের আউট সুইং বলটি ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি জেসন। বল তার ব্যাট স্পর্শ করে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের গ্লাভসে। ২০ বলের ইনিংসে মেরেছেন তিনি ৩ বাউন্ডারি।
কিউই পেসারদের চমৎকার বোলিংয়ে মোটেও সুবিধা করতে পারছিলেন না জো রুট। ফাইনালের চাপ সম্ভবত নিতে পারছিলেন এই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে মাত্র ৭ রান করে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের শিকার হন তিনি। উইকেটরক্ষক ল্যাথামের গ্লাভসে ধরা পড়েন রুট।
‘দ্বিতীয় জীবন’ নিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি জনি বেয়ারস্টো। লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হন ইংলিশ ওপেনার। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৫৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে করেন ৩৬ রান।
ব্যক্তিগত ১৮ রানে বেয়ারস্টোর বেঁচে গিয়েছিলেন। তার ব্যাট ছুঁয়ে আসা রিটার্ন ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন ডি গ্র্যান্ডহোম। সেই সুযোগটা অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। ফার্গুসনের বল তার ব্যাটে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। তাতে ৭১ রানে ইংল্যান্ড হারায় তৃতীয় উইকেট। ইংল্যান্ড আরও বিপদে পড়ে মরগান বিদায় নিলে। জিমি নিশামের বলে তার দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ফাগুর্সন। ইংলিশ অধিনায়ক আউট হওয়ার আগে ২২ বলে করেন ৯ রান।
কিউই পেসারদের তোপে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ায় স্টোকস ও বাটলারের জুটিতে। পঞ্চম উইকেটে ১১০ রানের জুটি গড়েন তারা, যাতে আবার জয়ের আশা জেগে ওঠে তাদের। কিন্তু ৫৯ রানে বাটলারকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু আনেন ফার্গুসন। পরের ওভারে ক্রিস ওকসকে ২ রানে ল্যাথামের ক্যাচ বানন কিউই পেসার। তাতে আবার চাপে পড়েছিল ইংল্যান্ড।
শেষ দুই ওভারে ২৪ রান দরকার ছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ৪৯তম ওভারে জিমি নিশামের বলে দুটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে তারা। শেষ ওভারে ১৫ রান দরকার ছিল তাদের। প্রথম দুই বলে রান নিতে না পারলেও তৃতীয় বলে ৬ মারেন স্টোকস। পরের বলে নাটকীয়ভাবে ৬ রান যোগ হয় তাদের স্কোরবোর্ডে। দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় ফিল্ডারের থ্রোয়ে বল তার ব্যাটে লেগে চার হয়। পঞ্চম বলে আদিল রশিদ রান আউট হন। শেষ ব্যাটসম্যান হয়ে নামেন মার্ক উড, স্ট্রাইকিংয়ে ছিলেন তিনি। দরকার ছিল ২টি রান। দৌড়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন উড। তবে সমতায় স্কোর শেষ করায় সুপার ওভারে গড়ায় ফাইনাল।
সুপার ওভারে আগে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। বোল্টের ওভারে স্টোকস ও বাটলারের ব্যাটে ১৫ রান করে তারা। স্টোকস ও বাটলার একটি করে বাউন্ডারি মারেন। লক্ষ্যে নেমে জোফরা আর্চারের প্রথম দুই বলেই আসে ৯ রান। প্রথম বল ওয়াইডের পর নিশাম ৬ মারেন। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ২টি করে রান নেন নিশাম। তাতে শেষ ২ বলে ৩ রান দরকার ছিল কিউইদের। আর শেষ বলে লক্ষ্য ছিল ২ রানের। মার্টিন গাপটিল দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন।