ন্যাশনাল ডেস্ক : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়া আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। তবে বিশ্বের প্রায় সবদেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখলেও কয়েকটি দেশকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যে তিনটি দেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে বাংলাদেশ, সেই তিনটি দেশ হলো রাশিয়া, ভারত ও চীন।
ভারত ও চীনকে বরাবরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হতো। সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক-উন্নয়নের জন্য জোর দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে কোন দেশের সঙ্গে কী সম্পর্ক হবে, তা নির্ধারিত হয়ে থাকে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের জাতীয় স্বার্থে যেভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটি চীনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে একেক দেশের সঙ্গে একেক ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ দিক থেকে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবচেয়ে বিস্তৃত ও গভীর।’
মুনশি ফায়েজ আহমেদ আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের নিকটতম বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবার চীনের কাছ থেকে আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাই। বাংলাদেশকে সহায়তা করার ক্ষমতা ও মানসিকতাও দেশটির আছে।’ রাশিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্পে তারা সহায়তা করছে। দেশটির কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকি। সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক-উন্নয়নের প্রয়াস নিচ্ছে সরকার।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জমির বলেন, ‘ভারত ও চীন এশিয়া মহাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি। চীনের ক্ষেত্রে দমননীতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত ও চীনÑ উভয় দেশই বাংলাদেশের বন্ধু। আমাদের জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উভয় দেশ।’
দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর উল্লেখ করে মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘এশিয়ায় চীন ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর বাংলাদেশ এর অংশ। আবার রাজনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি নিবিড়।’
ভারতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করেছেন, এমন একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত, নদী ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ অনেক বেশি। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক ও সামরিক।’ রাশিয়ার সঙ্গে নতুন মেরুকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক ছিল। বর্তমানে এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়ও যুক্ত হয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এভাবে ১৯৯০ পর্যন্ত চলার পর রাশিয়া নিজেই সংকটে পড়ে, যা প্রায় ১৫ বছর স্থায়ী হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়া আবারও পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাও ২০১০ সালের দিকে।’ তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হয় সরকার । ২০০৯ সাল থেকে রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একাধিক রাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করলেও সরকার রাশিয়ার সঙ্গেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া রাশিয়া থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জামও কিনেছে বাংলাদেশ।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও বাড়বে। এবারই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গে ল্যাভরভের আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী মস্কো যাচ্ছেন। সেখানে তিনি শীর্ষ পর্যায়ের সফরের বিষয়ে আলাপ করবেন। রাশিয়ার সঙ্গে আমরা ২০টি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছি। আমরা এই সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই।’
পূর্ববর্তী পোস্ট