খেলার খবর: খেলা যখন টি২০ আর প্রতিপক্ষ যেখানে আফগানিস্তান, তখন একটু হলেও ভাবনার জায়গা থাকে। কারণ ক্রিকেটের এই সংস্করণে আফগানিস্তান পরীক্ষিত ভালো দল। মাঠের পারফরম্যান্স ও র্যাংকিং মিলিয়ে রশিদ খানদেরই ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। সম্প্রতি একমাত্র টেস্টেও দারুণ ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছে তারা। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকা একটি দল আফগানিস্তান। এই দলের বিপক্ষে আজ জিততে হলে টিম ম্যানেজমেন্টের দেওয়া পরিকল্পনার চেয়েও একধাপ এগিয়ে গিয়ে অলআউট পারফরম্যান্স করতে হবে বাংলাদেশকে। ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির কাছ থেকে সে আশ্বাসই পাওয়া গেছে। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সাকিবদের এ ব্যাটিং কোচ জানান, আফগানিস্তানকে হারাতে সেরা ক্রিকেটটা খেলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন খেলোয়াড়রা। তার বিশ্বাস, পরিকল্পনামতো খেলতে পারলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া কঠিন হবে না।
তবে টি২০-তে দুই দলের রেকর্ড ও পরিসংখ্যান বাংলাদেশকে সহজে জয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। এই সংস্করণে দু’দলের চারবারের দেখায় এক ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপে। গত বছর আফগানদের হোম ভেন্যু ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজে হোওয়াইটওয়াশ হয়েছে। সেদিক থেকে একটু হলেও মনস্তাত্ত্বিক বাধা থাকবে। অবশ্য এই জড়তা ঝেড়ে ফেলে ভালো খেলার রসদ বাংলাদেশ পেয়ে গেছে শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে। হারতে থাকা একটা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত যেভাবে জিতেছে তাতে করে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসের পারদ উঠে গেছে চূড়ায়। এ ছাড়া টেস্ট হারের কষ্ট লাঘব করতে একটু হলেও প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করে থাকবে সাকিবদের হৃদয়ে। হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলার সুবিধাটাও কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে স্বাগতিক শিবির।
র্যাংকিং দেখলে বাংলাদেশকে টেস্ট ও টি২০র ভালো দল বলবে না কেউ। টি২০-তে এ পর্যন্ত ৮৬টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২৭টিতে জিতেছে। যদিও এই ৮৬ ম্যাচের বেশিরভাগই বড় দলের বিপক্ষে খেলা। সেখানে আফগানিস্তান ৭১ ম্যাচ খেলে ৪৯টিতেই জিতেছে। তাদের এই সাফল্যের বেশিরভাগই এসেছে ওমান, হংকং, আরব আমিরাত, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। তবে জয়ের অভ্যাস যে কোনো দলকে আত্মবিশ্বাস দেয়। আফগানরা জয়ের মধ্যেই আছে। গতকালের আগে খেলা সর্বশেষ ১০ ম্যাচে অপরাজিত তারা। বাংলাদেশেরও সাম্প্রতিক রেকর্ড মন্দ নয়। গত বছর টি২০-তেও দারুণ ক্রিকেট খেলেছে সাকিব বাহিনী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ জিতেছে। গত ডিসেম্বরে এই সংস্করণের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে হোম সিরিজ হারলেও পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রেরণা নিতে চাইলে নিদাহাস ট্রফি সবচেয়ে কাছের স্মৃতি। আফগানদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার কিছুদিন পরই শ্রীলংকাকে তাদের মাঠে দু’বার হারিয়ে তিন জাতির ওই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততে শেষ বলের খেলায় ফাইনালে হেরে যায় তারা। এ ছাড়াও দেশের মাটিতে অনেক শক্তিশালী দল বাংলাদেশ। ওয়ানডে, টি২০ এবং টেস্ট তিন ফরম্যাটেই গত বছর দুর্দান্ত সফল ছিল। ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিও সে কথা মনে করিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশ দেশের মাটিতে খেলছে। হোমে খুবই ভালো রেকর্ড তাদের। এমনকি বিদেশেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলছে কয়েক বছর ধরে। আমরা যদি ঠিকভাবে খেলতে পারি তাহলে প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। যে সময় খারাপ খেলে তার জন্য আমরাই দায়ী। পুরো দেশের মানুষই খেলোয়াড়দের ওপর মানসিক চাপে ফেলে। যেটা হওয়ার হয়েছে। কাল (আজ) আমরা শতভাগ দিয়ে ইতিবাচক এবং ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলব ও জিতব।’
মিরপুরে শুক্রবার ট্রু উইকেটে খেলে পাল্লা দিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। আশা করা যায় আজও একই উইকেট দেওয়া হবে। পেস ও স্পিন মিলে বোলিং কম্বিনেশন দিয়ে প্রতিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলাই হবে সাকিবদের লক্ষ্য। আর ব্যাটিং নিয়ে পুরো দলই খুব সিরিয়াস। গতকাল যে ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল সেখানে যে ১১ জন ক্রিকেটার এসেছিলেন, তাদের সবাই ব্যাটিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন নেটে। তাদের মধ্যে সাকিব, মুশফিক, সৌম্যরা ছিলেন। কারণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই তিনজনই রান করতে পারেননি। তারা যে রানে ফিরতে মরিয়া ঐচ্ছিক অনুশীলনেও সাকিবকে দেখলে তা বোঝা যায়। তবে আজকের ম্যাচ জিততে যেটা বেশি প্রয়োজন একটি ভালো গেম প্ল্যান ও ২২ গজে তা বাস্তবায়ন করা। কারণ এমনিতেই ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণে ছোট-বড় দলের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকে না। নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলা দলই জেতে। বিশেষ করে সাহসী ক্রিকেটারদের সঙ্গে টি২০ সংস্করণ বেশ যায়। কম বল খেলে বেশি রান করা, আঁটসাঁট বোলিং এবং নিখুঁত ফিল্ডিং দেওয়া দলেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাংলাদেশ দল এখনও সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। যেটা এরই মধ্যে আফগানিস্তান পেরেছে। তবে দুটি প্রতিশোধ স্পৃহাই জেতাতে পারে বাংলাদেশকে।