দেশের খবর: অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার হওয়া নিষিদ্ধ ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অস্ত্র ও মাদক রাখা এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এছাড়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে বুধবার রাতে গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে আলোচিত এই যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছে অস্ত্র, গুলি ও মাদক পাওয়া যায়। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত র্যাব-৩ এর হেফাজতে ছিলেন খালেদ।মামলা দায়েরের পর খালেদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার রিমান্ড আবেদন করে আদালতে তোলা হবে বলে গুলশান থানা পুলিশ জানিয়েছে।
খালেদকে গ্রেফতারের আগে তার মালিকানাধীন ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভ্রাম্মমান আদালত এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠান। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ওঠেছে নানা অভিযোগ। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের নেতা হওয়ায় তিনি এতদিন ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এই যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনোতে চলে জুয়া। সেখানে মাদকের ছড়াছড়ি। পাওয়া যায় ইয়াবাও।
খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এই নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ যুবলীগ নেতা খালেদের হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই অধিকাংশ টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।