- আ’লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অভিযানের ছক
- * ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফুলেফেঁপে ওঠা সরকারি কর্মকর্তারাও অভিযানের আওতায় আসছেন
দেশের খবর: অবৈধ ক্যাসিনো-মদ-জুয়ার পর সমাজে ছড়িয়ে পড়া নানা অসঙ্গতি ও দুর্নীতি দূর করতে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টার্গেটে এবার নদী দখলদার, ভূমিদস্যু ও বনখেকোরা। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।
নতুন এ অভিযানে বাদ পড়বেন না ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারাও।
এ ছাড়া আয়ের উৎস না থেকেও অবৈধ সম্পদ অর্জন, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ইতিমধ্যে সমালোচিত হয়েছেন- এমন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালানোর ছক কষা হয়েছে।
সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হবে। কাজ যত কঠিনই হোক, তা বাস্তবায়ন করবেনই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এ কথা জানা গেছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন শুক্রবার বলেন, অবৈধভাবে বন দখলকারী সহস্রাধিক ব্যক্তির নাম বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে দেয়া আছে। এতদিন বিষয়টি নীরব থাকলেও এখন নতুন করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি, দখলবাজির বিরুদ্ধে ঘোষিত নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছি।
সূত্র জানায়, টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকায় অনেক বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী ঠাঁই নিয়েছে আওয়ামী লীগে। দলীয় ও বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পরই কঠোর অবস্থান নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের কাছেই ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দলে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পর এবার যুবলীগ নেতাদের আমলনামা নিয়ে কাজ করছে দলের হাইকমান্ড। দখল-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ক্যাডারবাজিসহ সারা দেশে নানা অপকর্মে জড়িত যুবলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর তালিকা ধরে কাজ করা হচ্ছে। প্রমাণসহ দল ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তালিকা এখন দলীয় সভাপতির হাতে। তালিকা ধরেই চলছে অভিযান। এটি চলবে।
অভিযান শুরুর আগে গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যুবলীগের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা অস্ত্রবাজি করেন, ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান। এসব বন্ধ করুন। নইলে যেভাবে জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীদের দমন করা হয়েছে, একইভাবে এই অস্ত্রবাজদেরও দমন করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চলছে। এ নিয়ে কোনো নালিশ শুনতে চাই না। ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি। একে একে সব ধরব। সমাজের অসঙ্গতি দূর করব। জানি এগুলো কঠিন কাজ। কিন্তু আমি করব। অনেক বাধা আসবে। এরপরও আমি করবোই।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, নদী দূষণ ও দখল রোধে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি নদ-নদীর দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
নদী দখলের সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন তিনি। ক্যাসিনো অভিযানের পর সারা দেশের এই উচ্ছেদ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
জানা যায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তালিকা ধরে ভূমিদস্যু ও বন দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ছক আঁকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সরকারি চাকরি করে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকে গভীর নজর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমের মতো ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর আস্তানায় অভিযান চালানো হতে পারে। শুক্রবার ৬ দেহরক্ষী ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থসহ যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে নিকেতন থেকে আটক করেছে র্যাব।
এর আগে বুধবার যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে র্যাব। এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে-ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে র্যাব বিপুল পরিমাণ টাকা, মদসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ঢাকাজুড়েই অভিযান চলছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেছেন, আওয়ামী লীগে যারা অপকর্ম করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দুর্নীতি, অপকর্ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য অনেকেই নজরদারিতে আছেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ক্যাসিনোকেন্দ্রিক যে অভিযান- এটা ঢালাওভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে নয়। ছাত্রলীগ-যুবলীগে বহু ত্যাগী নেতাকর্মী আছে, তারা অনেক ভালো কাজও করছে। দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যারা জড়িত, যাদের আচরণে পার্টি এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, ঠিক তাদের বিরুদ্ধেই ‘কেস টু কেস’ খোঁজখবর নিয়ে অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী, দলীয় নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে রাখা প্রভাবশালী নেতা, অবৈধভাবে টাকা উপার্জনকারী এবং মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে সম্পদের পাহাড় গড়া নেতাদেরও আনা হবে অভিযানের আওতায়। তৃণমূলের অনেক ত্যাগী নেতা এ অভিযানের অপেক্ষায় আছেন।
লুটপাট থামাতে তৃণমূলে এ অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফেরদৌস আলম রাজু। শুক্রবার তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নাই, বাপ-দাদার সম্পত্তিও নাই। অথচ বাড়ি-গাড়ি করেছে, আঙুল ফুলে কলাগাছ বনেছে। এমন নেতাদের গ্রেফতার ও তাদের সম্পদের উৎস জানা দরকার।
রাজু বলেন, তৃণমূলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক প্রভাবশালী নেতার প্রধান আয়ের উৎস চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হোক। এতে সারা দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে। সূত্র: যুগান্তর