দেশের খবর: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হলেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। পুলিশ পাহারায় রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলো ছাড়েন তিনি। এ সময় তাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আজ রবিবার বিকালে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় উপাচার্য পদ থেকে তাকে অপসারণের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। শিক্ষার্থীদের ধারণা, উপাচার্য পদ থেকে ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ বা তাকে অপসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভিসি সাহেব (ড. নাসিরউদ্দিন) রাত ৮ টার দিকে তাকে ফোন করেন। তখন তিনি জরুরি অফিসিয়াল কাজে ঢাকা যাবেন বলে পুলিশ দিয়ে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে রাত ৯টার দিকে পুলিশ পাহারা দিয়ে তাকে বাংলো থেকে বের করে আনে পুলিশ।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পুলিশ পাহারায় উপাচার্যের বাংলো ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আমাদেরকে তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য পুলিশ প্রোটেকশন চেয়েছেন। আমরা তাকে পুলিশ প্রোটেকশনে বাংলো থেকে বের করে দিয়েছি। তিনি কোথায় গেছেন তা আমাদের জানা নেই।
তবে, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ ইউজিসি ভিসিকে প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ দেওয়ায় তিনি রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। এখন তার পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার বলেও তারা আশাবাদী।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফেসবুকে ব্যক্তিগত পেজে শেয়ার দেওয়ার অভিযোগকে সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে জিনিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাকে বহিষ্কারের ঘটনাটি বাংলা ট্রিবিউনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। এসময় এক বছরেই আরও ২৭ শিক্ষার্থীকে শাসন করার নামে তুচ্ছ কারণে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও শো-কজ করার ঘটনা প্রকাশ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই উপাচার্যের বহিষ্কার চেয়ে আন্দোলনে নামে। ওই আন্দোলনেও উপাচার্যের সমর্থক পেটোয়া বাহিনী হামলা চালালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও দুর্বার হয়ে ওঠে। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু উপাচার্যের আরও দুর্নীতি প্রকাশ পেলে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের এক দফা দারিতে আন্দোলন শুরু করে। এরপরই বিষয়টি তদন্তে নামে ইউজিসি।