ভিন্ন স্বাদের খবর: ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনি-শঙ্খের আওয়াজে পূজামণ্ডপগুলো মুখরিত।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের জোয়ার বইছে চারদিকে। আনন্দ-হুল্লোড়। হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত-দর্শনার্থীনা ভিড় করছে মণ্ডপগুলোতে। লাল বেনারসি, পায়ে আলতা, রক্তচন্দনের টিপ, মাথায় ফুলের মুকুট নিয়ে দুর্গাষ্টমীর দিন পূজিতা হবেন কুমারী। শুনলে মনে হবে, এ আবার নতুন কী! ঠিকই, এ পর্যন্ত তো সত্যিই কোনো অভিনবত্ব নেই।
তবে এবারের দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন চার বছর বয়সী যে বালিকা কুমারী রূপে পুজিতা হলেন তাঁর নাম ফতেমা। সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার এমন সময়ে সম্প্রতির দৃষ্টান্ত হিসেবে ওই মুসলিম বালিকাকে কুমারী রূপে পূজা করা হয় কলকাতার বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্তবাড়িতে।
বাগুইআটির বাসিন্দা তমাল দত্ত ২০১৩ সাল থেকে নিজের বাড়িতেই পূজা করে আসছেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তমাল দত্ত দীর্ঘদিনের ইচ্ছে বাড়ির পূজায় হিন্দু নয় এমন কোনো বালিকাকে দেবী দুর্গা হিসেবে পূজা করা হবে।
সেই ইচ্ছে পূর্ণ হলো এত দিনে। তমাল দত্তের এই ইচ্ছের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন কামারহাটির বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি তাঁর চার বছর বয়সী ভাগ্নি ফতিমাকে কুমারী পূজার জন্য বাগুইআটির দত্তবাড়িতে দিতে রাজি হন।
আগ্রার ফতেপুরে মুদি দোকানে কাজ করেন ফতিমার বাবা মোহাম্মদ তাহির। মা ও বাবার সঙ্গে ফতিমাও থাকে সেখানে। তমাল দত্তের ইচ্ছের কথা ইব্রাহিমের মুখে শুনে সুদূর আগ্রা থেকে মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় ছুটে আসেন তাহির ও তাঁর স্ত্রী বুশরা। অষ্টমীর সকালে বাগুইআটির দত্তবাড়িতে ধূমধাম করে পূজিত হয় কুমারী ফতিমা।
প্রসঙ্গত, কুমারী পূজা সম্পর্কে হিন্দুদের বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা হয়েছে, রাম-রাবণের যুদ্ধে রামকে জেতাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর একযোগে নেমে পড়েছেন। তখন শরত্কাল, দক্ষিণায়ন। দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই ব্রহ্মা দেবীকে স্মরণ করলেন। দেবী কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্ববৃক্ষমূলে (বেল গাছ) দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন স্তবে তাকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকামূর্তি ত্যাগ করে চণ্ডিকামূর্তি ধারণ করলেন। তন্ত্রসার মতে, এক থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত। তাদের অবশ্যই ঋতুমতি হওয়া চলবে না।